চট্টগ্রাম   শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪  

শিরোনাম

ভূমি অধিগ্রহণ ঃ দালালচক্রের মামলার ফাঁদে আটকে আছে হাজার কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক    |    ০৬:৫৯ পিএম, ২০২১-০১-১১

ভূমি অধিগ্রহণ ঃ দালালচক্রের মামলার ফাঁদে আটকে আছে হাজার কোটি টাকা


ভূমি অধিগ্রহণে দালালচক্রের মামলার কারণে আটকে আছে হাজার কোটি টাকা। বছরের পর বছর ঘুরেও টাকা পাচ্ছেন না জমি মালিকরা। কয়েকশ’ ভূমি মালিক বর্তমানে অসহায়। মামলা তুলে নেয়ার বিনিময়ে ৫০ ভাগ কমিশন চায় মামলাবাজ দালালচক্র। 
জানা গেছে, ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় ৪ ধারার নোটিশ জারির পর জেলা  প্রশাসকের কাছে  প্রতিকার চাওয়া ছাড়া কেউ কোনো মামলা করতে পারবেন না। এমন আইনী বিধানকে সামনে রেখে ২০১৯ সালের ২১ মে ভূমি মন্ত্রণালয় একটি পরিপত্র জারি করে। কিন্তু উক্ত বিধান অনুসারে জেলা  প্রশাসকের কাছে  প্রতিকার না চেয়ে মামলা দায়ের করছে ভূমিদস্যু একাধিক চক্র। উক্ত চক্রে আছে রাজনৈতিক নেতা, আইনজীবী টাউট ও ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কিছু অসাধু কর্মকর্তা। 
অভিযোগ আছে, ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় ৮ ধারা (পূর্বের স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল অধ্যাদেশ, ১৯৮২-এর ৭ ধারা) নোটিশ জারির পর মানুষকে হয়রানির উদ্দেশ্যে জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে একাধিক চক্র টাইটেল মোকদ্দমা দায়ের করছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এসব মামলার কারণে একদিকে ভূমি অধিগ্রহণপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ হচ্ছে, অপরদিকে জমির প্রকৃত মালিকেরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থও দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
চট্টগ্রামে এমনই একটি চক্রের করা মামলার ফাঁদে পড়ে অন্তত এক হাজার ক্ষতিগ্রস্থ ভূমি মালিক ক্ষতিপূরণের টাকা পেতে আদালতের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছেন ৫ থেকে ৭ বছর ধরে। যেসব প্রকৃত ভূমি মালিক ক্ষতিপূরণের ৪০-৫০ শতাংশ টাকা হাতে তুলে দেওয়ার চুক্তিতে আসছে, তাদেরকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দিচ্ছে চক্রটি। পরে আদালতের হলফনামা জমা দিয়ে ওই চক্রটি ভূমি অধিগ্রহণ শাখা থেকে তুলে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র জারির পরও থেমে নেই চক্রগুলোর টাইটেল মামলার ফাঁদ। এলএ শাখা সূত্র জানিয়েছে, ২০১৯ সালের ২১ মে থেকে অদ্যাবধি চট্টগ্রাম শহর ও জেলা এলাকায় ৭টি মেগা প্রকল্পসহ ১২০টি সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করা জমি নিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে অন্তত তিন শতাধিক মামলা হয়েছে। এসব মামলার কারণে অন্তত হাজার কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে পড়ে আছে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র জারির পরও কেন মামলার বিষয়টি আমলে নেওয়া হচ্ছে-জানতে চাইলে এলএ শাখার ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা (১) নাজমা বিনতে আমিন বলেন, ‘ভূমি মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র দিয়ে পরিস্থিতি কাভার দেওয়া যাচ্ছে না। এজন্য ‘ভূমি অধিগ্রহণ বিধিমালা-২০২০’ নামে একটি প্রস্তাব তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেটি কার্যকর করা হলে জমির প্রকৃত মালিকদের ভোগান্তি কমে আসবে।’
এদিকে নগরের হালিশহর, উত্তর ও দক্ষিণ পতেঙ্গা মৌজায় সরকারের পাঁচটি মেগা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করা কয়েকশ’ একর জমি নিজেদের দাবি করে ২০১৫ সালে চট্টগ্রামের তৃতীয় যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলা করেন এমইউএম আবুল হোসেন নামের এক ব্যক্তি। উক্ত পাঁচ মেগা উন্নয়ন প্রকল্পের জমির ক্ষতিপূরণ দাঁড়ায় ৭৫২ কোটি টাকায়।
সরকারি কোষাগারে ৭৫২ কোটি টাকা পড়ে থাকলেও মালিকানার বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়ায় ক্ষতিপূরণের টাকাও পরিশোধ করতে পারছে না ভূমি অধিগ্রহণ শাখা। এই দুর্ভোগের জন্য ভুক্তভোগীরা জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কিছু কর্মকর্তাকে দুষছেন।
চট্টগ্রাম জজ আদালতের সিনিয়র আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, সংবিধানের ৪২ (২) অনুচ্ছেদে ক্ষতিপূরণসহ বাধ্যতামূলকভাবে স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে আদালতে কোনও প্রশ্ন উত্থাপন বা মামলা না করার বিষয়ে বলা হয়েছে। স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল আইন, ২০১৭ এর ৪৭ ধারায় অধিগ্রহণ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে মামলা মোকদ্দমা না করার বিষয়েও বিধিনিষেধ রয়েছে।
তিনি বলেন, ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে আইনের ৪ ধারা (পূর্বের আইনের ৩ ধারা) এবং ৮ ধারা (পূর্বের আইনের ৭ ধারা) নোটিশ জারির পর আর কোনো অভিযোগ গ্রহণের সুযোগ নেই বিধায় আইনের ৪৭ ধারা যথাযথভাবে প্রতিপালনের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ করে ২০১৯ সালের ২১ মে পরিপত্র জারি করেছিল ভূমি মন্ত্রণালয়।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালে নগরের পতেঙ্গা ও হালিশহর এলাকার তিন মৌজায় প্রায় দেড় হাজার একর জমির মালিকানা দাবি করে এইউএম আবুল হোসেন নামে এক ব্যক্তি চট্টগ্রামের তৃৃতীয় যুগ্ম জেলা জজ আদালতে অপর মামলা (৭৫৪/১৫) দায়ের করেন। মামলাটি চলমান থাকায় ক্ষতিগ্রস্থদের টাকা পরিশোধ করা যাচ্ছে না।
ভূমি হুকুমদখল কর্মকর্তারা জানান, ২০১৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ ৬ মাসের মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য বিচারিক আদালতকে নির্দেশ প্রদান করেন। আজও তা নিষ্পত্তি হয়নি। পৃথক সাতটি জমি অধিগ্রহণ (এলএ) মামলা মূলে পাঁচটি মেগা প্রকল্পের জন্য চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা, হালিশহর ছাড়াও আনোয়ারায় একটি মেগা প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করা হয়েছে প্রায় ৩০০ একর জমি।
মেগা প্রকল্প হলো-বে টার্মিনাল, নৌবাহিনীর উল্কা ঘাট প্রকল্প, এলএনজি পাইপ লাইন (জিটিসিএল প্রকল্প), কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ প্রকল্প এবং সিটি আউটার রিং রোড প্রকল্প, আনোয়ারা অর্থনৈতিক অঞ্চল ও মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল।
এসব প্রকল্পের জন্য জমির ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ হয়েছে ১ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করা গেছে ৪০১ কোটি টাকা। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় ৭৫২ কোটি বিলি করা সম্ভব হচ্ছে না।
জানা গেছে, সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করা জমির ক্ষতিপূরণের টাকা বাগিয়ে নিতে জেলা প্রশাসনের একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে অপতৎপরতা চালিয়ে আসছে। এরমধ্যে কেউ আদালতে মামলা ঠুকে দিয়ে, কেউ দলিল বা খতিয়ান টেম্পারিং করে প্রকৃত জমির মালিকদের সর্বশান্ত করছে।
প্রভাবশালী উক্ত চক্রে আছে এক শ্রেণীর আইনজীবী, সরকারি দলের নেতাসহ বেশ কিছু টাউট। ভূমি অধিগ্রহণ কার্যালয় ঘিরে গড়ে উঠা এ চক্রের দৌরাত্মে অতিষ্ঠ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারাও। এ চক্রে আছে সরওয়ার, মোজাম্মেল, আরমান, ইকবাল, আশীষ, মিঠুন, সুমন, চেইনম্যান নজরুল, করিম, সার্ভেয়ার দীপু ও জাহাঙ্গীর, আহমদ নবী।
এর মধ্যে চেইনম্যান নজরুল ২০১৯ সালে গ্রেফতার হন। চিটাগাং শপিং কমপ্লেক্সের একটি দোকানে অভিযান চালিয়ে নগদ সাড়ে সাত লাখ টাকা ও কোটি টাকার চেকসহ তাকে গ্রেফতার করেছিল দুদক। আহমদ নবী জেলা প্রশাসনে নিজেকে ‘ক্ষমতাধর’ ব্যক্তি হিসেবে প্রচার করেন। চক্রে আছে সরকারি দলের মহানগর শাখার মাঝারি থেকে শুরু করে শীর্ষ পদে থাকা অনেক নেতা। আছে চট্টগ্রামের  প্রভাবশালী এক মন্ত্রীর কাছের কিছু লোকজনও।
২০১৯ সালের ২১ মে ভূমি মন্ত্রণালয়ের জারি করা পরিপত্র অনুসরণ করা হচ্ছে বলে জানিয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) বদিউল আলম বলেন, ‘ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় ৪ ধারার নোটিশ জারির পর সংঘবদ্ধ একাধিক চক্র মামলা দায়েরের কারণে  প্রকৃত জমির মালিকরা ক্ষতিপূরণের টাকা পেতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। তাদের ভোগান্তি দূর করতে শিগগিরই আসছে ‘ভূমি অধিগ্রহণ বিধিমালা-২০২০’। এ বিধিমালা কার্যকর হলে ৪ ধারার নোটিশ জারির পর অধিগ্রহণকৃত জমির মালিকানা নিয়ে কারো দাবি বা মামলার বিষয়টি এলএ শাখায় গ্রহণ করা হবে না।’
 

রিটেলেড নিউজ

সলিমপুরে নজরদারি বাড়াতে কার্যালয় খুলছে প্রশাসন

সলিমপুরে নজরদারি বাড়াতে কার্যালয় খুলছে প্রশাসন

স্টাফ রিপোর্টার : : নতুন করে কোনো বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে না। সলিমপুরে পাহাড় ব্যবস্থাপনার জন্য, কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খ...বিস্তারিত


নিয়ন্ত্রণ হারালো হানিফ পরিবহনের বাস, নিহত ১

নিয়ন্ত্রণ হারালো হানিফ পরিবহনের বাস, নিহত ১

স্টাফ রিপোর্টার : : হানিফ পরিবহনের একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুটি সিএনজি অটোরিকশা, মিনিবাস ও মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দিয়...বিস্তারিত


প্রতিমা বিসর্জনে মানুষের ঢল

প্রতিমা বিসর্জনে মানুষের ঢল

স্টাফ রিপোর্টার : :  বিজয়া দশমীর আনুষ্ঠানিকতা শেষে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে প্রতিমা বিসর্জন শুরু হয়েছে। ব...বিস্তারিত


চট্টগ্রামে ২২ জনের করোনা শনাক্ত

চট্টগ্রামে ২২ জনের করোনা শনাক্ত

আমাদের ডেস্ক : : চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২২ জনের দেহে করোনাভাইরাসের জীবাণু পাওয়া গেছে। শনাক্তের হার ১৮ দশমিক ১...বিস্তারিত


ইসলামী ব্যাংক এখন আসকার দীঘির পাড়ে

ইসলামী ব্যাংক এখন আসকার দীঘির পাড়ে

খবর বিজ্ঞপ্তি : চট্টগ্রাম নগরীর আসকার দীঘির পাড়ে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড-এর ৩৮৮তম শাখার উদ্বোধন করা হয়ে...বিস্তারিত


 বায়তুশ শরফ জাতিভিত্তিক একটি আধ্যাত্মিক ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান :শিক্ষা উপ-মন্ত্রী 

বায়তুশ শরফ জাতিভিত্তিক একটি আধ্যাত্মিক ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান :শিক্ষা উপ-মন্ত্রী 

খবর বিজ্ঞপ্তি : বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল (অনার্স-মাস্টার্স) মাদ্রাসার ৪০তম বার্ষিক সভা ও নির্বাচিত বেসরকারী মাদ্রা...বিস্তারিত



সর্বপঠিত খবর

নেশনস কাপের ফাইনালে মুখোমুখি সালাহ-মানে

নেশনস কাপের ফাইনালে মুখোমুখি সালাহ-মানে

স্পোর্টস ডেস্ক : : ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের জায়ান্ট লিভারপুলের জার্সিতে খেলেন দুজনেই। আক্রমণভাগে দুজনের রসায়নে অলরেড...বিস্তারিত


ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠানো নিয়ে পশ্চিমাদের আবারও রাশিয়ার হুশিয়ারি

ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠানো নিয়ে পশ্চিমাদের আবারও রাশিয়ার হুশিয়ারি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : : রাশিয়ার মাটিতে আঘাত হানতে পারে— এমন সব অস্ত্র ইউক্রেনকে সরবরাহ করার বিষয়ে পশ্চিমা দেশগুলোকে হু...বিস্তারিত



সর্বশেষ খবর