চট্টগ্রাম   বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪  

শিরোনাম

৩ মার্চ বিশ্ব জন্মগত ত্রুটি দিবস" সচেতনতা করতে পারে জন্মগত ত্রুটি

ডা.মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ    |    ০৬:৫৫ পিএম, ২০২২-০৩-০২

৩ মার্চ বিশ্ব জন্মগত ত্রুটি দিবস

আজ ৩ মার্চ বৃহস্পতিবার   ‘বিশ্ব জন্মগত ত্রুটি দিবস’ ২০২২ । ২০১৫ সাল থেকে বাংলাদেশে এ দিনটি পালিত হয়ে আসছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো এদেশেও অনেক শিশুই জন্মগত ত্রুটি নিয়ে ভূমিষ্ঠ হচ্ছে।  স্বাস্থ্য  সংস্থার তথ্য মতে, বিশ্বে প্রতি ১০০ শিশুর ৩ থেকে ৬ জন বড় ধরনের জন্মগত ত্রুটিতে আক্রান্ত এবং এই সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আরেকটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বিশ্বে প্রায় প্রতিবছর আট মিলিয়ন বাচ্চার ৬ ভাগ মারাত্মক জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। এদের মধ্যে ৩ দশমিক ৩ মিলিয়ন শিশু জন্মানোর পাঁচ বছরের মধ্যে মারা যায়। শিশুমৃত্যুর চতুর্থ কারণ হিসেবে জন্মগত ত্রুটিকে বিবেচনা করা হয়। প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় দুই লাখ ৭০ হাজার শিশু মারা যায় এ কারণে এবং ৩ দশমিক ২ মিলিয়ন শিশু, যারা মৃত্যুর ছোবল থেকে বেঁচে যায়, তারা আজন্ম শারীরিক অথবা মানসিক প্রতিবন্ধী হিসেবে দিন কাটায়।
২০১৬ সালের ৩ মার্চ ‘বিশ্ব জন্মগত ত্রুটি দিবস’উপলক্ষে প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি প্রতিবেদনে জানা যায়, প্রতি ১০ জনে একের অধিক নবজাতক শিশু জন্মগত ত্রুটিজনিত কারণে মারা যায়। সাধারণত জন্মের সময় যদি শিশুর দেহের কোনো অঙ্গ অনুপস্থিত বা ত্রুটিপূর্ণ থাকে, তাহলে তাকে জন্মগত ত্রুটি বলে।

বিভিন্ন কারণে শিশুরা জন্মের সময় ত্রুটিযুক্ত হতে পারে 
বিভিন্ন কারণে শিশুরা জন্মের সময় ত্রুটিযুক্ত হতে পারে।এটি শরীরের গঠনগত, কার্যগত, মেটাবলিক বা জেনেটিক অসামঞ্জস্য যা ভ্রূণ অবস্থাতেই উৎপন্ন হয়। জন্মগত ত্রুটি সম্পর্কে আমাদের দেশের মানুষের স্বচ্ছ ধারণা নেই। বেশির ভাগ সময়ে মাকেই শিশুর জন্মগত ত্রুটির জন্য দোষারোপ করা হয়। অনেকে এর কারণ হিসেবে গর্ভকালীন সূর্যগ্রহণ/চন্দ্রগ্রহণের প্রভাব, খাবার খাওয়ার ফল, মানুষের কুনজর, জিন-পরির আসরকে দায়ী মনে করে।তবে এখন পর্যন্ত জন্মগত ত্রুটি সম্পর্কে যেসব কারণ জানা গেছে, তার মধ্যে রয়েছে বংশগত, জিনগত, রক্তসম্পর্কীয় বিবাহ, খুব কম বা বেশি বয়সে সন্তান ধারণ, অপুষ্টি, গর্ভকালীন ধূমপান ও মদ্যপান, সংক্রামক রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হরমোনজনিত সমস্যা, খিঁচুনি, অপচিকিৎসা, তেজস্ক্রিয়তা, ভেজাল খাদ্যদ্রব্য, চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত জন্মনিয়ন্ত্রণকারী ওষুধ সেবন ইত্যাদি।আজকের বিষয় নিয়ে কলাম লিখেছেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট গবেষক ও জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা ডা.এম এম মাজেদ তাঁর কলামে লিখেন... প্রত্যেক নারীই চায় একটি সুস্থ এবং স্বাস্থ্যবান শিশু জন্ম দিতে। কিন্তু ছোটো ছোটো কিছু ভুলের কারণে শিশুর জন্মগত ত্রুটি দেখা যায়। এই জন্য অনেক শিশু জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। শিশুদের বিভিন্ন জন্মগত ত্রুটি হয়। যেমন : ঠোঁট কাটা, তালু কাটা, হাতের আঙুল বেশি থাকা, আঙুল একসঙ্গে লেগে থাকা ইত্যাদি।আবার অনেক সময় দেখা যায় জন্মের পর পর ছোট ছেলে বা মেয়ের হয়তো দুটো আঙুল অথবা চারটা আঙুল এক সঙ্গে লাগানো থাকছে। চার হাত-পায়ে হতে পারে। একটি বাড়তি আঙুল থাকতে পারে। এক হাতে, দুই হাতে অথবা চার হাত-পায়ে। শুধু একটি নয়।
দেখা যাচ্ছে, দুই পাশেই থাকতে পারে। অনেকের দেখা যায়, এক পাশে সাত থেকে আটটা আঙুল, আরেক হাতে সাত থেকে আটটা আঙুল। এগুলোকে বলা হয় মিরর হ্যান্ড। হাত-পা দুই জায়গাতেই থাকতে পারে।
এরপর দেখা যায়, জন্মের পর চোখে একটা কালো লাল দাগ থাকতে পারে। সাধারণত মুখে খুব বেশি হয়। যেহেতু ছোট বাচ্চা, সবার দৃষ্টি থাকে মুখে। দেখা যায়, মুখে লাল একটি দাগ। অথবা অনেকে ভাবে পিঁপড়া অথবা মশার কামড়। আস্তে আস্তে এটি কালো দাগ হয়ে যায়। একে বলা হয় হেমানজিওমা।আর শরীরে কোথাও একটি ছোট কালো দাগ, তিলের মতো। পরে দেখা যায় আস্তে আস্তে এটি বড় হচ্ছে। একে দেখা যায় কনজেনিটাল নিভাস। শরীরের একটি অংশ দেখা যায় খুব কালো হয়ে গেছে। এরপর লিম্ফেনজিওমার মতো কিছু জিনিস থাকতে পারে।
একটি হাতের আঙুল বা দুইটা হাতের আঙুল একটু বড় মনে হচ্ছে। চার/ পাঁচ দিন পর থেকে হঠাৎ করে এটি বড় হওয়া শুরু করে। একে লিম্ফেনজিওমা বলে। আবার আরেকটি হতে পারে। একে বলে নিউরোফাইব্রোমা। ঠিক হাতের এই আঙুলগুলো বড় হতে পারে। একটি পুরো হাত বড় হতে পারে অথবা দেখা যায় মুখের একটি অংশ ঝুলে আছে। যখন বয়স বাড়তে থাকে, তখন দেখা যায় এক পাশ ঝুলে পড়ে আছে। একে বলা হয় নিউরোফাইব্রোমা।আর চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের মতে, জন্মগত ত্রুটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা, কিন্তু এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি লক্ষ করা যায় মধ্যম ও নিম্ন আয়ের দেশগুলোয়। পৃথিবীতে প্রায় চার হাজারের বেশি রকমের জন্মগত ত্রুটি রয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ৩৩ শিশুর একজন জন্মগত ত্রুটি নিয়ে পৃথিবীতে আসে। স্বল্প আয়ের দেশগুলোর মায়েদের পুষ্টিহীনতা, দারিদ্র্য, আত্মীয়ের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক, জিনগত ও বংশানুক্রমিক রোগের কারণগুলো দায়ী করা হয়। জন্মগত ত্রুটিকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। কাঠামোগত জন্ম  অর্থাৎ কোন অঙ্গ জন্ম থেকেই অস্বাভাবিক, অকেজো, অসম্পূর্ণ। যেমন : হৃৎপিণ্ডের সমস্যা। অন্যটি হচ্ছে শারীরবৃত্তীয় অকার্যকারিতা। এ কারণে যেসব জন্মগত ত্রুটি হয়ে থাকে তা হলো, খাদ্যরস পাচিত না হওয়ার কারণে বিপাকীয় সমস্যা, বুদ্ধিবৃত্তির অনুন্নতি, বধির, দৃষ্টিস্বল্পতা ইত্যাদি।
গবেষণায় এও দেখা গেছে, ছেলেশিশুদের জন্মগত ত্রুটির সংখ্যা মেয়েশিশুদের তুলনায় বেশি। যেমন পাঁচ হাজার ৫৯৮ শিশুর মধ্যে তিন হাজার ৮৩৭ জন ছেলে এবং এক হাজার ৭৬১ জন মেয়ে। অর্থাৎ ছেলে : মেয়ে-২.১ : ১। মৃত্যুর হিসাব করলে দেখা গেছে, তিন হাজার ৯২১ জন জন্মগত ত্রুটি শিশুর সার্জারি করা হয়েছিল এবং ২২৫ শিশু গবেষণা চলাকালেই মৃত্যুবরণ করেছিল। 

সুশিক্ষা এবংসচেতনতাই পারে এই সমস্যা প্রতিকার করতে 
সুশিক্ষা এবং সচেতনতাই পারে এই সমস্যা প্রতিকার করতে

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, প্রতি ২০ হাজার কন্যাশিশুর মধ্যে একজন এ ধরনের শারীরিক ত্রুটি নিয়ে জন্মগ্রহণ করছে। যাদের মূত্রনালি, ঋতুস্রাবের রাস্তা এবং মলদ্বার একসঙ্গে মিলিত হয়ে একটি ছিদ্র দিয়ে বের হয়। এই দুর্লভ প্রকারটি কখনো কোনো পুরুষ শিশুর শরীরে চিহ্নিত হয়নি।
জন্মগত ত্রুটির বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি ও কারণগুলো অনুসন্ধান ও প্রতিকারের মাধ্যমে শিশুদের স্বাভাবিক ভবিষ্যৎ নিশ্চিতকরণ ও গবেষণার সুযোগ তৈরির জন্য সারা বিশ্বের সরকারি-বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগ নেয়ার পাশাপাশি সুস্থ, স্বাভাবিক শিশুর জন্ম নিশ্চিত করার আশঙ্কা ও প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে সবার এগিয়ে আসা উচিত।
এজন্য গর্ভধারণের আগেই মা-বাবার পূর্ব ইতিহাস জেনে শিশুর জন্মগত ত্রুটির ঝুঁকি নির্ণয় ও প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। ভ্রূণের প্রথম ১২ থেকে ২২ সপ্তাহে ‘হাই রেজল্যুশন আল্ট্রাসনোগ্রামের’ মাধ্যমে বেশির ভাগ ত্রুটি বোঝা যেতে পারে। তাই এই সময়ে গর্ভবতী মায়েদের ‘অ্যানোমালি স্ক্যানিং’ করানো উচিত। এ ছাড়া জিনগত সমস্যা শনাক্ত করতেরক্ত পরীক্ষা এবং ‘অ্যামনিওটিক ফ্লুইড অ্যানালাইসিস’, ‘কোরিওনিক ভিলাস স্যাম্পল অ্যানালাইসিস’ ইত্যাদি এখন বাংলাদেশেই সম্ভব।
হোমিও সমাধানঃ-শিশুদের এই সকল রোগের সর্বাধিক কার্যকর চিকিৎসা নিশ্চিত করছে হোমিওপ্যাথি। পৃথিবীতে হোমিওপ্যাথি ছাড়া অন্য সকল চিকিৎসা শাস্ত্র উপরি উপরি চিন্তা করে চিকিৎসা কার্য্য সম্পাদন করে থাকে যার কারণে মূল থেকে রোগ নির্মূলে ব্যর্থ হয় তারা। তাছাড়া হোমিওপ্যাথি ছাড়া অন্যান্য চিকিৎসা শাস্ত্রে বহু দুরারোগ্য বা ক্রনিক রোগের চিকিৎসাই নেই। একমাত্র হোমিওপ্যাথি রোগের বাস্তব কারণ অনুসন্ধান করে মূল থেকে যেকোন দুরারোগ্য রোগ নির্মূলের চিকিৎসা দিয়ে থাকে। আর এই কারণেই শিশুর জন্মগত এবং জন্মের পর মারাত্মক রোগ ব্যাধির সবচেয়ে কার্যকর এবং সুচিকিৎসা নিশ্চিত করছে হোমিওপ্যাথি। তবে এর জন্য অবশ্যই এক্সপার্ট কোন হোমিও চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে চিকিৎসা নেয়া জরুরী।


লেখক, সম্পাদক ও প্রকাশক দৈনিক স্বাস্থ্য তথ্য 
প্রতিষ্ঠাতা,জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি। 
ইমেইল, drmazed96@gmail.com

রিটেলেড নিউজ

পাঁচ দিনের ছুটির ফাঁদে দেশ

পাঁচ দিনের ছুটির ফাঁদে দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক : টানা পাঁচ দিনের ছুটির ফাঁদে আটকা পড়েছে দেশ। বুধবারের সরকারি ছুটিকে কেন্দ্র করে এমন পরিস্থিতি তৈর...বিস্তারিত


বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে দোকানে মোমবাতি সংকট

বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে দোকানে মোমবাতি সংকট

নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতীয় গ্রিডে ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিপর্যয়। দুপুর ২টা থেকে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা। এ প...বিস্তারিত


বিদ্যুৎ ফিরতে শুরু করেছে

বিদ্যুৎ ফিরতে শুরু করেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতীয় গ্রিডের সঞ্চালন লাইনে বিভ্রাটের কারণে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের পর সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ ফিরতে শুরু কর...বিস্তারিত


২০২৩ সালে দুর্ভিক্ষের কবলে পড়তে পারে বিশ্ব: প্রধানমন্ত্রী

২০২৩ সালে দুর্ভিক্ষের কবলে পড়তে পারে বিশ্ব: প্রধানমন্ত্রী

ঢাকা অফিস : : ২০২৩ সালে বিশ্বে দুর্ভিক্ষ এবং অর্থনৈতিক মন্দা আরও ব্যাপকভাবে দেখা দিতে পারে এমন আশঙ্কার কথা জান...বিস্তারিত


দেশের পথে প্রধানমন্ত্রী

দেশের পথে প্রধানমন্ত্রী

ঢাকা অফিস : : যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে ১৮ দিনের সরকারি সফর শেষে দেশের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ ...বিস্তারিত


আওয়ামী লীগ স্বচ্ছ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়

আওয়ামী লীগ স্বচ্ছ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়

ঢাকা অফিস : : আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ক্ষমতাসীন আ...বিস্তারিত



সর্বপঠিত খবর

নেশনস কাপের ফাইনালে মুখোমুখি সালাহ-মানে

নেশনস কাপের ফাইনালে মুখোমুখি সালাহ-মানে

স্পোর্টস ডেস্ক : : ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের জায়ান্ট লিভারপুলের জার্সিতে খেলেন দুজনেই। আক্রমণভাগে দুজনের রসায়নে অলরেড...বিস্তারিত


ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠানো নিয়ে পশ্চিমাদের আবারও রাশিয়ার হুশিয়ারি

ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠানো নিয়ে পশ্চিমাদের আবারও রাশিয়ার হুশিয়ারি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : : রাশিয়ার মাটিতে আঘাত হানতে পারে— এমন সব অস্ত্র ইউক্রেনকে সরবরাহ করার বিষয়ে পশ্চিমা দেশগুলোকে হু...বিস্তারিত



সর্বশেষ খবর