চট্টগ্রাম   শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪  

শিরোনাম

বিশ্বাসঘাতকরা যুগে যুগে ঘৃণার প্রতিক বহন করে

মুহাম্মদ আমির হোছা্ইন ::    |    ১০:৩০ পিএম, ২০২২-০৬-২২

বিশ্বাসঘাতকরা যুগে যুগে ঘৃণার প্রতিক বহন করে

১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে নদীয়া জেলার সদর, প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে পলাশীর যুদ্ধ ভাগীরথীর নদীর তীরে পলাশীর আম বাগানে ইংরেজদের সঙ্গে যুদ্ধে বাংলা বিহার ও উড়িষ্যার নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার পরাজয় বরণ করে। এর মধ্য দিয়েই বাংলার স্বাধীনতা পুরোপুরি বিনষ্ট হয়েছিল,পরপরই ভারতবর্ষে ইংরেজ-শাসনের সূচনা হয়েছিল ।ফলে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য দীর্ঘ দিনের জন্য অস্তমিত হয়ে পড়ে।প্রায় দু'শত বছরের জন্য পুরাে জাতিকে ইংরেজদের অধীনস্ত গোলামী বরণ করতেছিল

এ যুদ্ধের ফলাফলে নবাবের পরাজয় হলেও ,এখনও এদেশের মানুষ নবাবকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। নবাবের মৃত্যু  বিশ্বাসঘাতকতার কাছে একজন দেশপ্রমিক, আর্দশিক নেতার মৃত্যু বলে বিশ্বাস করে। বিশ্বাসঘাতকতা নিয়ে কথা আছে, বিশ্বাসঘাতকতার ক্ষেত্রে সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয়টি হচ্ছে যে এটি কখনই আপনার শত্রুেদর কাছ থেকে আসে না” । ইতিহাস বলছে, যে প্রাসাদ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এবং পরাজয়ের ইতিহাস রচনা করেছিল ,তাঁর পেছনে জড়িত নিজের সেনাপতি মীর জাফর এবং তাঁর আপন খালা (মেহেরুন্নেছা )ঘসেটি বেগম। এই ঘসেটি বেগম ছিলেন পলাশীর যুদ্ধে সিরাউদ্দৌলার পরাজয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র ছিল ।পরবর্তীতে তিনিও নিজেও ষড়যন্ত্রের  শিকার হয়েছিলেন, জীবনের শেষ দিনগুলো কেটেছিল ঢাকার কাছে একটি প্রাসাদে বন্দী অবস্থায়, পরে বুড়িগঙ্গায় ডুবে তার করুণ মৃত্যু হয়েছিল। অন্যদিকে আজও বাংলার মানুষ কাছে ষড়যন্ত্রের কুশীলব মীরজাফর নামটি ঘৃণার প্রতিক হয়ে রয়েছে।

ষোল শতকের শেষের দিকে এদেশে ইউরোপীয়,প্রাচ্যের বাণিজ্যের ব্যাপকভাবে প্রসার ঘটে। এ সময়ে ইংরেজরা এদেশে বাণিজ্যিকভাবে অন্যান্য‌ চেয়ে অগ্রগামী হয়। ইতিহাসে থেকে জানা যায়, যে ১৭১৯ সালে মুর্শিদকুলী খাঁ বাংলার সুবাদার নিযুক্ত হন। তার মৃত্যুর পর ওই বছরই সুজাউদ্দিন খাঁ বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার সিংহাসন লাভ করেন। এই ধারাবাহিকতায় আলীবর্দী খাঁর পর ১৭৫৬ সালের ১০ এপ্রিল মাত্র ২২ বছর বয়সে সিরাজউদ্দৌলা বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার সিংহাসনে আসীন হন। সিংহাসনে আসীন হওয়ার পর তরুণ নবাবের সাথে ইংরেজদের বিভিন্ন বিষয়ে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। ফলে ইংরেজরা নবাবের কারনে সুবিধা করতে পারছি না । ফলে তারা ষড়যন্ত্রের পাত খুজতে থাকে । নবাবের পিতামহ আলীবর্দী খাঁর বিশ্বস্ত অনুচর  ক্ষমতালিপ্সু মীর জাফর ও খালা ঘষেটি বেগম ইংরেজদের সাথে গোপনে সম্পর্ক স্থাপন নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের নীলনকশা তৈরি করে। এ ধারাবাহিকতায় মীরজাফরের সিংহাসন লাভের বাসনা ও ইংরেজদের পুতুল নবাব বানানোর পরিকল্পনা,নবাবের নিষেধ সত্ত্বেও ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ সংস্কার, কৃষ্ণ বল্লভকে কোর্ট উইলিয়ামে আশ্রয় দান  করে । মুর্শিদাবাদের বাহু বিশিষ্ঠ ব্যক্তি যেমন,রায়দুর্লভ,জগতশেঠ,রাজবল্লভ,উঁমিচাদ,ইয়ার লতিফ প্রমুখ  ইংরেজ কর্তৃক ক্ষমতার মোহে ষড়যন্ত্রে সরাসরি অংশগ্রহণ করে পলাশীর যুদ্ধের পটভুমি তৈরি করে ।

১৭৫৭ সালের ২৩ জুন ভাগীরথী নদীর তীরে পলাশীর আমবাগানে সকাল সাড়ে ১০টায় ইংরেজ ও নবাবের মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়।সেদিন নবাবের ৫০ হাজার সৈন্য আর ইংরেজদের মাত্র ৩ হাজার সৈন্য । মীর মদন ও মোহন লালের বীরত্ব সত্ত্বেও মীর জাফর নেতৃত্বে বিশাল বাহিনী নবাবের পক্ষে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি ।সেদিন মীর জাফর,জগৎশেঠ, রায় দুর্লভ, উর্মিচাঁদ, ইয়ার লতিফ প্রমুখ ষড়যন্ত্রকারীদের বিশ্বাসঘাতকতার ফলে নবাবের পরাজয় ঘটে। ইতিহাসবিদ মতে , পলাশীর আম বাগানে বিশ্বাসঘাতকতা না হলে নবাবের বিজয়  সুনিশ্চিত ছিল। ফলে বাংলার স্বাধীনতার  সূর্য প্রায় দু'শ বছরের জন্য অস্তমিত হয়ে পড়ে ।

এতে বিশ্বাসঘাতকরাদের আশাও গুড়ে বালি পরিণত হল। বিশ্বাসঘাতকতা অন্ধকারও করে দেয়” আর মীর জাফেরের বিশ্বাসঘাতকতা দু'শত বছরের জন্য বাংলাকে আকাশকে ইংরেজদের মাধ্যমে কালো অন্ধকারের চেয়ে ফেলেছিল। তবে অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন যে,মীরজাফরের নবাব বিরোধী যাবতীয় কর্মকাণ্ডের মূলে ছিল জগৎ শেঠ। মীর জাফরের সাহায্য ছাড়া সিরাজকে হঠিয়ে ইংরেজরা বাংলায় আধিপাত্য বিস্তার করতে পারবে না এটা বুঝতে পেরে , জগৎ শেঠ তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপ মীর জাফর মাধ্যমে আদায় করছেন।


ক্ষমতার মোহে পাগল হয়ে জাতীয়বাদী চেতনা, সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে দেয় । তারা পরদেশী গোলামীত্বকে বরণ করতে দিধাবোধ করে না। দীর্ঘ লঞ্চনা-বঞ্চনার পরে  দেশপ্রমিক জনতাকে তারঁ মাশুল দিতে তাদের বুকের রক্তে। পরাধীনতাকে ভেঙ্গে স্বাধীনতার লার সুর্যকে। স্বাধীনতাকামী মানুষগুলো ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে তাদের নাম লেখে,বিশ্বাসঘাতকরা যুগে যুগে ঘৃণার প্রতিক বহন করে ।

লেখক:সাংবাদিক

রিটেলেড নিউজ

হালদা নদী দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র নয় 

হালদা নদী দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র নয় 

আমাদের ডেস্ক : : বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ নামে পরিচিত হালদা নদী নিয়ে বহুল প্রচারিত একটি ভূল মতবাদ রয়েছে। মতবাদটি হ...বিস্তারিত


বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯২তম জন্মদিন

বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯২তম জন্মদিন

ডা.মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ : সোমবার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিনী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের ৯...বিস্তারিত


বিশ্ব শান্তি রক্ষায় বিশ্ব নেতৃত্ব মানবিক হোন

বিশ্ব শান্তি রক্ষায় বিশ্ব নেতৃত্ব মানবিক হোন

আমাদের ডেস্ক : : সারা বিশ্বের মধ্যে করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে বিশ্বে অর্থনৈতিক অবস্থা ভেঙে পড়েছে। এর ফলে সারা ব...বিস্তারিত


বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদের ভৌগলিক সার্বভৌমত্ব কোথায় !

বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদের ভৌগলিক সার্বভৌমত্ব কোথায় !

মুহাম্মদ আমির হোছা্ইন :: : মুহাম্মদ আমির হোছাইন ভূগোল ইতিহাসের ভিত্তি।আর মানুষের কর্মকান্ড কোন এক ভৌগোলিক পরিবেশে সংঘটি...বিস্তারিত


পদ্মা সেতু সহজে যাত্রীদের গন্তব্যে নিয়ে যাবে

পদ্মা সেতু সহজে যাত্রীদের গন্তব্যে নিয়ে যাবে

আমাদের ডেস্ক : : পদ্মা সেতু নিয়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খুব লেখালিখি হচ্ছে।প্রতিনিয়ত প্রতিমুহূর্তে সেতুর  নান...বিস্তারিত


 শিশুদের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা অত্যাবশ্যক

 শিশুদের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা অত্যাবশ্যক

ডা.মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ : আজ রবিবার  ১২ জুন বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস ২০২২। সারা বিশ্বে শিশুশ্রম বিষয়ে মানুষকে সচেতন ...বিস্তারিত



সর্বপঠিত খবর

নেশনস কাপের ফাইনালে মুখোমুখি সালাহ-মানে

নেশনস কাপের ফাইনালে মুখোমুখি সালাহ-মানে

স্পোর্টস ডেস্ক : : ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের জায়ান্ট লিভারপুলের জার্সিতে খেলেন দুজনেই। আক্রমণভাগে দুজনের রসায়নে অলরেড...বিস্তারিত


ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠানো নিয়ে পশ্চিমাদের আবারও রাশিয়ার হুশিয়ারি

ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠানো নিয়ে পশ্চিমাদের আবারও রাশিয়ার হুশিয়ারি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : : রাশিয়ার মাটিতে আঘাত হানতে পারে— এমন সব অস্ত্র ইউক্রেনকে সরবরাহ করার বিষয়ে পশ্চিমা দেশগুলোকে হু...বিস্তারিত



সর্বশেষ খবর