চট্টগ্রাম   মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪  

শিরোনাম

ক্যান্সার প্রতিরোধে সচেতনতা প্রয়োজন

ডা.মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ    |    ০৬:৫৪ পিএম, ২০২২-০২-০৫

ক্যান্সার প্রতিরোধে সচেতনতা প্রয়োজন

১৯৯০ সাল থেকে করা পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতি বছরে নতুন ৮.১ মিলিয়ন ক্যান্সারে আক্রান্তের তথ্য পাওয়া যায়। ২০১৮ সাল নাগাদ বছরে ১৮.১ মিলিয়ন নতুন রোগীর তথ্য পাওয়া যায়। এটি এমন একটি রোগ, যার কারণে প্রতিবছর প্রায় ৯ দশমিক ৬ মিলিয়ন মানুষ মারা যাচ্ছে এবং এর মধ্যে প্রায় ৭০ ভাগই আমাদের মতো দেশের মানুষ। এর পেছনে বহু কারণ থাকতে পারে।অংশগ্রহণকারী ক্যানসার বিশেষজ্ঞগণঅংশগ্রহণকারী ক্যানসার বিশেষজ্ঞগণ খাদ্যাভ্যাস থেকে শুরু করে ধূমপান বা মদ্যপান কিংবা ব্যায়ামের অভাবেও এ ধরনের রোগের ঝুঁকি বাড়ে। এমনকি শুধু তামাকই সারা পৃথিবীতে ২২ শতাংশ মানুষের মৃত্যুর কারণ।এ ছাড়া আমাদের দেশের প্রায় ২৬ শতাংশ মানুষ চিকিৎসার সুব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত। আমাদের দেশেও ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বর্তমানে এটি ২০ লাখের বেশি।ক্যান্সার আক্রান্তদের মধ্যে ৩০ বছর থেকে ৬৯ বছর বয়সী শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ রোগীর অকাল মৃত্যু হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ক্যান্সার আক্রান্তদের অকাল মৃত্যুরোধে দ্রুত রোগ শনাক্ত ও চিকিৎসা শুরুর উপর গুরত্বারোপ করেছে।আমাদের দেশে তামাকজনিত ক্যানসারগুলোতে পুরুষেরা বেশি আক্রান্ত হয়। এ ছাড়া খাদ্যনালি ও কোলন ক্যানসারেও পুরুষেরা বেশি আক্রান্ত হয়। প্রোস্টেট ক্যানসার তুলনামূলকভাবে কম হয়। আর নারীদের ক্ষেত্রে স্তন ক্যানসার, জরায়ু মুখের ক্যানসার, খাদ্যনালি, কোলন ক্যানসার, ডিম্বাশয়ের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। তবে আজকাল নারীদের ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যাও বাড়ছে। আর নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই নাক-কান-গলার ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার হার বেড়ে চলেছে। প্রচলিত ক্যান্সার সমূহের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় যথাক্রমে ফুসফুস, স্তন ও অন্ত্রের ক্যান্সার। বৈশ্বিকভাবে এই বিষয়কে গুরুত্বের সাথে যদি এখনই না নেওয়া হয় তবে ধারণা করা যায় যে ২০৩০ সাল নাগাদ বছরে ক্যান্সার জনিত মৃত্যুর সংখ্যা ১৩.১ মিলিয়নে দাঁড়াবে।যদিও বর্তমানে মানুষের মধ্যে পাওয়া ক্যান্সারের ৪০% এরও বেশি নিরাময়যোগ্য এবং আক্রান্ত রোগীর বেঁচে যাওয়ার সংখ্যাও ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। বিগত দশক ধরে ক্যান্সার নিয়ে পড়াশোনা এবং একে বোঝার ফলস্বরূপ সম্ভবত এই উন্নতি সম্ভব হয়েছে যা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নতুন সম্ভাবনারও জন্ম দিয়েছে। ক্যান্সার নির্ণয়, চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে যে অগ্রগতি দেখা যায় তা রোগীদের ক্যান্সারের সুষ্ঠু চিকিৎসার ব্যাপারে সর্বোচ্চ আস্থা দেয়।আজকের বিষয় নিয়ে কলাম লিখেছেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট হোমিও গবেষক ও জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা, ডা. এম এম মাজেদ তাঁর কলামে লিখেন...ক্যান্সার একটি কালান্তর ব্যাধি।বা কর্কটরোগ অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন সংক্রান্ত রোগসমূহের সমষ্টি। এখনও পর্যন্ত এই রোগে মৃত্যুর হার অনেক বেশি। কারণ প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার রোগ সহজে ধরা পড়ে না, ফলে শেষ পর্যায়ে গিয়ে ভালো কোন চিকিৎসা দেয়াও সম্ভব হয় না। বাস্তবিক অর্থে এখনও পর্যন্ত ক্যান্সারে চিকিৎসায় পুরোপুরি কার্যকর কোনও ওষুধ আবিষ্কৃত হয় নি। ক্যান্সার সারানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। তবে প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পরলে এই রোগ সারানোর সম্ভাবনা অনেকাংশ বেড়ে যায়। ২০০ প্রকারেরও বেশি ক্যান্সার রয়েছে। প্রত্যেক ক্যান্সারই আলাদা আলাদা এবং এদের চিকিৎসা পদ্ধতিও আলাদা। বর্তমানে ক্যান্সার নিয়ে প্রচুর গবেষণা হচ্ছে এবং এ সম্পর্কে নতুন নতুন অনেক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।ক্যান্সার নামটা ভয়ঙ্কর সৃষ্টিকারী।ভয়াবহতা সম্বন্ধে আমার কিছু না বললেও চলে,বর্তমান সমাজে,বন্ধু বান্ধব আত্নীয় স্বজনের মধ্যে এই ভয়ঙ্কর  রোগে জীবন দান করেনি এমন লোক পাওয়া যাবে না। যুদ্ধ,প্লাবন ও দুর্ভিক্ষ,সমাজ জীবনে সাময়িকভাবে আসে আবার চলে যায়, বহু জীবন ধ্বংস করে, কিন্তু এই  বিধ্বংসী রোগ ক্যান্সার ক্রমাগত মানব সমাজকে ধ্বংসের দিগে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমার চেয়ে ও আর ও বড় বড় মনীষী এর ধ্বংসলীলার বিবরণ দিয়েছেন।গত দুই যুগ ধরে এ রোগে যত রোগী মৃতুবরন করেছেন,কোন যুদ্বেও এত লোক জীবনাহুতি দেয়নি, এই রোগে মানুষের দুঃখ কষ্ট ও জীবননাশের কোন হিসাব নেই।রাখা সম্ভবও নয়।অসহায় মানুষ অনবরত আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে, এই রোগের হাত থেকে মুক্তি পেতে।স্বামী-হারা  স্ত্রী, স্ত্রী হারা-স্বামী, পিতৃ মাতৃহারা শিশু, জীবনের অর্জিত সম্পদ ভেসে যাওয়া ক্যান্সার এই সব দুঃখ কষ্টের কারণ।এর একমাএ কারণ -রোগ ও এই রোগের উৎপত্তি কারণ সস্বন্ধে অজ্ঞতা এবং চিকিৎসা পদ্ধতি সম্বন্ধে ও অজ্ঞতা।ক্যান্সারে হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার বা মানুষকে রক্ষা করার একমাএ পথ হল রোগের কারণগুলি বিশ্লেষণ করা।  মানব দেহে যত রকম জটিল ও কঠিন রোগ আছে ক্যান্সার তার অন্যতম। মানুষের শরীরটা একটি চলমান ফ্যাক্টরি। মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষকে তৈরি করে শরীরের ভেতর ও বাহিরে যে সমস্ত অঙ্গ-প্রতঙ্গ দিয়েছেন তাদের প্রত্যেকটির নিদিষ্ট কাজ নির্ধারণ করে রেখেছেন। আমাদের নিত্যদিনের চলাফেরা ও খাওয়া-দাওয়ার ইত্যাদির নির্দিষ্ট জীবন আচরণে অনিয়ম হলেই আমারা অসুস্থ হয়ে পড়ি। বিভিন্ন রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ি। আমরা মানুষ বহুকোষী প্রাণী। অংসখ্য কোষের সমন্বয়ে মানবদেহ গঠিত হয়। প্রতিটি কোষের একটি নির্ধারিত আয়ুষ্কাল আছে। কোষ বিভাজনের মাধ্যমে শরীরে নতুন কোষ সৃষ্টি হয়। কিন্তু এটি অনিয়ন্ত্রিতভাবে হলে শরীরে মাংসের দলা বা চাকা সৃষ্টি হয়। এটিই টিউমার নামে পরিচিত। অনেক ক্ষেত্রে টিউমার ক্ষতিকর হয় না। কেবল ফুলে থাকে, এটি ‘বেনাইন টিউমার’ নামে পরিচিত। ক্ষতিকর টিউমারগুলো ম্যালিগন্যান্ট টিউমার বা ক্যান্সার নামে পরিচিত। শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্ত বা লসিকানালীর মাধ্যমে এটি ছড়িয়ে পড়ে অকাল মৃত্যু ডেকে আনতে পারে।
ক্যান্সার কোনোভাবেই সংক্রামক নয়, অর্থাৎ একজন থেকে আরেকজনে সংক্রমিত হয় না।
★ক্যন্সার কি?
বিশ্বেসমস্ত প্রাণীর শরীর অসংখ্য ছোট ছোট কোষের মাধ্যমে তৈরি। এই কোষগুলো একটা নির্দিষ্ট সময় পরপর মারা যায়। এই পুরনো কোষগুলোর জায়গায় নতুন কোষ এসে জায়গা করে নেয়। সাধারনভাবে কোষগুলো নিয়ন্ত্রিতভাবে এবং নিয়মমতো বিভাজিত হয়ে নতুন কোষের জন্ম দেয়। সাধারনভাবে বলতে গেলে যখন এই কোষগুলো কোনও কারণে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকে তখনই ত্বকের নিচে মাংসের দলা অথবা চাকা দেখা যায়। একেই টিউমার বলে। এই টিউমার বিনাইন বা ম্যালিগন্যান্ট হতে পারে। ম্যালিগন্যান্ট টিউমারকেই ক্যান্সার বলে। বিস্তারিতভাবে বলতে গেলে, অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজনক্ষম হয়ে বৃদ্ধি পাওয়া কলাকে নিওপ্লাসিয়া (টিউমার) বলে, এবং সেই রকম ক্রিয়া যুক্ত কোষকে নিওপ্লাস্টিক কোষ বলে। নিওপ্লাস্টিক কোষ আশেপাশের কলাকে ভেদ করতে না পারলে তাকে বলে নিরীহ বা বিনাইন টিউমার। বিনাইন টিউমর ক্যান্সার নয়। নিওপ্লাসিয়া কলা ভেদক ক্ষমতা সম্পন্ন হলে তাকে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার বা ক্যান্সার, এবং তার অনিয়ন্ত্রিত বিভাজনক্ষম ভেদক ক্ষমতাযুক্ত কোষগুলিকে ক্যান্সার কোষ বলে। অনেক ক্যান্সার প্রথমে বিনাইন টিউমার হিসাবে শুরু হয়, পরে তার মধ্যেকার কিছু কোষ পরিবর্তিত (ট্রান্সফর্মেসন) হয়ে ম্যালিগন্যান্ট (অর্থাৎ ভেদক ক্ষমতাযুক্ত) হয়ে যায়। তবে বিনাইন টিউমার ক্যান্সারে পরিবর্তিত হবেই তার কোন স্থিরতা নেই। কিছু বিনাইন টিউমার সদৃশ ব্যাধি আছে যাতে ক্যান্সার হওয়া অবশ্যম্ভাবী - এদের প্রি-ক্যান্সার বলে। নামে বিনাইন অর্থাৎ নিরীহ হলেও বিনাইন টিউমারও চাপ দিয়ে আশেপাশের কলার ক্ষতি করতে পারে। মেটাস্ট্যাসিস হলো ক্যান্সারের একটি পর্যায়, যাতে ক্যান্সার কোষগুলি অন্যান্য কলাকে ভেদ করে ও রক্ত, লসিকাতন্ত্র  ইত্যাদির মাধ্যমে দূরবর্তী কলায় ছড়িয়ে যায়। স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর যদি আমরা ধুমপান করি তাহলে অন্যথায় এটি নাও হতে পারে ।
★ক্যান্সার সম্পর্কিত তথ্যঃ-
১.ক্যান্সার যে কাউকে প্রভাবিত করতে পারে। তবে ক্যান্সারের কারণে বেশিরভাগ মৃত্যুর ঘটনা স্বল্প ও মধ্য আয়ের দেশগুলিতে ঘটে।
২.মৃত্যুর প্রায় ১৬% ক্যান্সারের কারণে ঘটে।
৩.ডাব্লুএইচও অনুযায়ী, তামাকের কারণে ক্যান্সারজনিত ২২% মৃত্যুর কারণ হয়।
৪.লিভার, ফুসফুস, পেট, প্রোস্টেট এবং অন্ত্র, কোলন বা মলদ্বারের ক্যান্সার সবচেয়ে সাধারণ ধরণের যা পুরুষদের হত্যা করে।
৫.মহিলাদের ক্যান্সারের কারণে মৃত্যু সাধারণত ফুসফুস, কলোরেক্টাল, স্তন, পেট এবং জরায়ুর ক্যান্সারের কারণে ঘটে।
৬.ক্যান্সার সৃষ্টিকারী রোগজীবাণু এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে টিকা দেওয়া যেমন জরায়ু ক্যান্সারের কারণ এইচপিভি (হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস) এবং লিভারের ক্যান্সারের কারণ এইচবিভি (হেপাটাইটিস বি) ক্যান্সারের কারণে মৃত্যুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে সহায়তা করে।
৭.ক্যান্সার রোগীদের শতকরা শতকরা প্যালিটিভ কেয়ার (এমন যত্নের লক্ষ্য যা জীবনযাত্রার মান উন্নত করা এবং গুরুতর এবং জটিল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ভোগা প্রশমন প্রশমিত করা) বিশ্বজুড়ে মাত্র ১৪% only
উচ্চ-আয়ের দেশগুলিতে বসবাসকারীদের তুলনায় স্বল্প আয়ের দেশগুলির ক্যান্সারের চিকিত্সায় কম অ্যাক্সেস রয়েছে।
৮.ক্যান্সারের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব রয়েছে, এবং এটি বছরের পর বছর বাড়ছে।
ক্যান্সার যত্ন এবং প্রতিরোধের সাথে কিছু অগ্রগতি হলেও এটি প্রত্যাশা পূরণ করে না। ৯.ক্যান্সারের কারণে মৃত্যুর হার কমাতে আরও অনেক কিছু করার আছে। বিশ্ব ক্যান্সার দিবস প্রচারগুলি সচেতনতা বাড়াতে এবং ক্যান্সার যত্ন প্রদানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত প্রত্যন্ত ও নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে। তারা বলে, "আপনি সার্ফটি মসৃণ করতে পারবেন না, তবে আপনি তরঙ্গগুলি চালানো শিখতে পারেন” " আসুন আমরা আমাদের কিছুটা করি এবং বিশ্ব ক্যান্সার দিবস কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়ে এবং ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা এবং যাচাই জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে সহায়তা করে প্রত্যেককে তরঙ্গ চালায় উৎসাহিত করি।
★ক্যান্সার আক্রান্তের প্রথম লক্ষণগুলি খেয়াল করতে হবেঃ-
* দীর্ঘস্থায়ী আপনি যদি দীর্ঘ সময় ধরে ক্লান্তিবোধ করেন অথবা অবসাদে ভোগেন তবে সেটা অনেক রোগেরই কারণ হতে পারে, হতে পারে ক্যান্সারও। মলাশয়ের ক্যান্সার বা রক্তে ক্যান্সার হলে সাধারণত এমন উপসর্গ দেখা যায়।তাই, আপনি যদি স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি ক্লান্তিবোধ করেন অথবা দীর্ঘসময় ধরে ক্লান্ত থাকেন, অবিলম্বে চিকিৎসাসেবা নিন।
* আকস্মিক ওজন হ্রাস
কোনো কারণ ছাড়া হঠাৎ করেই দ্রুতগতিতে যদি ওজন হারাতে থাকেন, তবে ভাবনার কারণ আছে।অনেক ক্যান্সারই সাধারণত হুট করে ওজন কমিয়ে ফেলে। তাই শরীরের ওজনের দিকে খেয়াল রাখতে হবে সবসময়। 
প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার শনাক্ত করা গেলে চিকিৎসাসেবায় রোগীকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব৩. দীর্ঘদিনের ব্যথা
দৃশ্যত কোনো কারণ (যেমন জখম-আঘাত) ছাড়া যদি আপনি দীর্ঘদিন ধরে শরীরের কোনো স্থানে ব্যথায় ভোগেন, তবে তাতে ওষুধও কাজ না করলে এ নিয়ে ভাবনার কারণ আছে। শরীরের কোন জায়গায় ব্যথা করছে তার ওপর নির্ভর করছে রোগী ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত নাকি ডিম্বাশয়, পায়ুপথ বা মলাশয়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত।
* অস্বাভাবিক মাংসপিণ্ড
আপনি যদি শরীরের কোনো অংশে অস্বাভাবিক কোনো মাংসপিণ্ড দেখতে পান অথবা মাংস জমাট হতে দেখেন কিংবা এ ধরনের পরিবর্তন বুঝতে পারেন, তবে এটা তেমন কিছুরই লক্ষণ, যা আপনার কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত। এমনকি আপনার শরীরে কোনো পরিবর্তন স্বাভাবিক মনে হলেও পর্যবেক্ষণ করুন, এরপর অন্তত চিকিৎসককে জানান।
* ঘন ঘন জ্বর ক্যান্সার শরীরে জেঁকে বসলে স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। এতে ঘন ঘন জ্বর দেখা দেয়। দুর্ভাবনার ব্যাপার হলো, কিছু ক্যান্সারে শেষ পর্যায়েরই উপসর্গ ঘন ঘন জ্বর। তবে ব্ল্যাড ক্যান্সারসহ এ ধরনের কিছু ক্যান্সারে প্রাথমিক পর্যায়েই ঘন ঘন জ্বর দেখা দেয় শরীরে। 
ঘন ঘন জ্বর ক্যান্সারে উপসর্গ।
* ত্বকে পরিবর্তন
অনেকেই ত্বকের ক্যান্সারে  ব্যাপারে সচেতন নন। ত্বকে অস্বাভাবিক পরিবর্তনই এমন ক্যান্সার শনাক্ত করার সহজ উপায়। তাই ত্বকে অতিরিক্ত তিল বা ফ্রিকেল অথবা আঁচিলের দিকে খেয়াল করুন। যদি এর রং, আকারে অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা যায়, তবে অবিলম্বে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। ত্বক লালচে হয়ে যাওয়া, ফস্কুড়ি পড়ে যাওয়া এবং রক্তক্ষরণও অন্যান্য ক্যান্সারে উপসর্গ।
* দীর্ঘস্থায়ী কাঁশি আপনি যদি দেখেন যে ওষুধ সেবনের পরও কাশি সারছেই না, তবে শীতকালীন কাশির চেয়েও এটা বেশি কিছু ধরে নিতে হবে। আর এই কাশির কারণে যদি আপনার বুক, পিঠ বা কাঁধে ব্যথা করে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।  
* মল-মূত্রত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন যদি মল বা মূত্রত্যাগের জন্য ঘন ঘন শৌচাগারে যেতে হয়, তবে এখানে ক্যান্সার নিয়ে ভাবনার কারণ আছে। ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্যও মলাশয়ের ক্যান্সারে লক্ষণ। মূত্রত্যাগের সময় অন্ত্রে ব্যথা বা রক্তক্ষরণ মূত্রথলির ক্যান্সারে উপসর্গ।
*  অকারণে রক্তক্ষরণ
যদি কাশির সময় রক্তক্ষরণ হয়, তবে এটা ক্যান্সারে বড় লক্ষণ। এছাড়া স্ত্রী অঙ্গ (ভ্যাজিনা) বা মলদ্বার থেকে রক্তক্ষরণসহ এ ধরনের অন্যান্য অস্বাভাবিকতাও ক্যান্সারে উপসর্গ।
* খাবার গ্রহণে সমস্যা
কেউ খাবার খেলেই যদি নিয়মিত বদহজমে ভোগেন, তবে পেট, কণ্ঠনালী বা গলার ক্যান্সার নিয়ে ভাবনার কারণ আছে। অবশ্য সাধারণত এসব উপসর্গকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয় না। তবু অসুস্থতাকে কখনো এড়িয়ে যেতে নেই।
* অন্যান্য উপসর্গ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উপরে উল্লিখিত উপসর্গগুলোকে ক্যান্সারে সাধারণ লক্ষণ মনে করা হয়। তবে এর বাইরেও অনেক লক্ষণ আছে ক্যান্সারে। এগুলোর মধ্যে আছে পা ফুলে যাওয়া, শরীরের আকারে বা অনুভূতিতে অস্বাভাবিক পরিবর্তন ইত্যাদি।সবশেষ কথা হলো, ক্যান্সারে অনেক কারণ বোঝাও যায় না, এমনকি অন্য ক্যান্সারে চিকিৎসার পরবর্তী পরিণতি হিসেবে আরেক ক্যান্সার দেখা দেয়। তাই শরীরের যেকোনো অসুস্থতাকেই গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসাসেবা নিতে হবে। বিশেষ করে বয়স ৩০-৪০ বছর পেরিয়ে গেলে অবশ্যই প্রতি অর্ধবছর বা প্রতিবছর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে।
★ ক্যান্সারে কারণঃ
জীবনযাপন প্রণালী, পরিবেশ, খাদ্যাভ্যাস, ভৌগোলিক অবস্থান, বয়স, বংশানুক্রম ইত্যাদি বিষয় ক্যান্সার সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। সাধারণত জীবাণু দ্বারা ক্যান্সার হয় না, তবে পরিপাকতন্ত্রের ক্যান্সারসহ কিছু ক্ষেত্রে জীবাণুর প্রভাব রয়েছে ক্যান্সার সৃষ্টিতে।
★ক্যান্সার রোগীদের জন্য কিছু পরামর্শঃ-
রেডিও থেরাপি বা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে ক্যান্সার রোগীরা খাদ্য গ্রহণে কিছু অসুবিধার সম্মুখীন হন, যার মধ্যে সাধারণ সমস্যাগুলো হচ্ছে- ক্ষুধামন্দা, খাদ্যের স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি কমে যাওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া, গ্যাস জমে পেট ফুলে থাকা, পেটে ব্যথা, শুষ্ক মুখ, ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা, বমি বমি ভাব, মুখে ঘা হওয়া, গলা ব্যথা ও ফুলে যাওয়া, বমি, ওজন হ্রাস প্রভৃতি।
এই বিরূপ পরিস্থিতির বিরুদ্ধে লড়াই করা অনেক ক্ষেত্রেই কঠিন হয়ে পড়ে রোগীদের চরম খাদ্য বিতৃষ্ণার কারণে, যা মূলত কেমোথেরাপির ফল। এ জন্য খাদ্য গ্রহণের দুই-তিন ঘণ্টা আগে ও পরে কেমোথেরাপি বন্ধ রাখা বাঞ্ছনীয়। শর্করা এবং চর্বি থেকে ক্যান্সার রোগীরা অনেক শক্তি পাবে। অপুষ্টিতে ভুগতে থাকা রোগীর জন্য প্রয়োজন অতিরিক্ত কিছু আমিষ।
* জরায়ুর ক্যান্সার, ব্রেস্ট, প্রোস্টেট এবং কোলন ক্যান্সার রোগীদের অতিরিক্ত চর্বিবহুল খাদ্য পরিহার করা দরকার। এ ছাড়াও অতিরিক্ত ক্যালরিবহুল খাদ্য গ্রহণ গলব্লাডার ও  এন্ড্রমেট্রিয়াম ক্যান্সারে জন্য ক্ষতিকর। বেশ কিছু খাদ্য আছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধী যেমন- আঁশযুক্ত খাবার কোলোরেক্টাল ক্যান্সার প্রতিহত করে।
* পাকস্থলী ও খাদ্যনালীর ক্যান্সারে বিরুদ্ধে কাজ করে ভিটামিন-সি যুক্ত খাবার। * ভিটামিন-এ ও ক্যারোটিন যুক্ত খাদ্য ফুসফুস, ব্লাডার ও গলনালী ক্যান্সার প্রতিরোধী। ফল ও সবজিতে ক্যান্সার প্রতিরোধী অনেক উপাদান আছে। ডালজাতীয় খাদ্যের মধ্যে সয়াবিন, মসুর, শুকনো সীমের বীচিতে ক্যান্সার বিরোধী উপাদান রয়েছে। * সয়া খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ বাড়ালে তা ব্রেস্ট এবং কোলন ক্যান্সারে ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। লাইকোপেন ও ক্যারোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন- গাজর, টমাটো, প্রভৃতি ও ভারিয়ান ক্যান্সারে ঝুঁকি কমায়। এ ছাড়াও ভিটামিন-এ এবং ভিটামিন-ই এর সম্পূরক ফর্ম এর খাদ্যগুলোকে খাদ্য তালিকা হতে বাদ রাখার সুপারিশ করা হয়ে থাকে। কারণ এটি ক্যান্সার কোষের ধ্বংসে এবং ক্যান্সার চিকিৎসায় বাধা দেয়।
★ ক্যান্সারে হোমিও প্রতিকারঃ
মানব জীবনে যত দুরারোগ্য ব্যাধি আছে ক্যান্সার তাঁর মধ্যে  একটি। তবে ধর্মীয় নিয়মনীতি মেনে চললে ও জীবন চলায় স্বাস্থ্য বিধি মানলে এ রোগ থেকে দূরে থাকা যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে ক্যান্সারে চিকিৎসা করাটা সহজ। শরীরের যে অংশে ক্যান্সার ধরা পড়ে সেখান থেকে ক্যান্সার আক্রান্ত টিস্যু হোমিও ওষুধের মাধ্যমে অপসারণের চিকিৎসা দেয়া হয়। এ রোগের চিকিৎসা প্রাথমিক অবস্থায় সারাতে না পারলে বিপদ হতে পারে। এ রোগ বেড়ে গিয়ে জটিল ও কঠিন আকার ধারণ করতে পারে। অনেক সময় জীবননাশের সম্ভাবনা দেখা দেয়। একুশ শতকের পৃথিবীতে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে হোমিও চিকিৎসাও ব্যাপক উন্নতি সাধন করেছে। উন্নত হয়েছে হোমিও ওষুধের গুণগতমান। সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় করে ওষুধ প্রয়োগ করলে হোমিও চিকিৎসায় দ্রুত সুফল পাওয়া যায়। আশার কথা এই যে, প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করতে পারলে বেশিরভাগ ক্যান্সারেই  হোমিও চিকিৎসায় কার্যকর। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ সেবন করলে আল্লাহর রহমতে হোমিওতে সম্ভব।

 লেখক,
সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক স্বাস্থ্য তথ্য 
প্রতিষ্ঠাতা,জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি 
মোবাইল.০১৮২২৮৬৯৩৮৯
ইমেইল.drmazed689@gmail.com

রিটেলেড নিউজ

চট্টগ্রাম ওয়াসাকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করুন ।

চট্টগ্রাম ওয়াসাকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করুন ।

সম্পাদকীয় ডেস্ক :: : চট্টগ্রাম নগরীতে ওয়াসা ৮শ’ কিলোমিটার সঞ্চালন পাইপ লাইনের মাধ্যমে নগরের ৮০ হাজার গ্রাহকের কাছে &l...বিস্তারিত


যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন নতুন অর্থনৈতিক জোটের লক্ষ্য আসলে কী, কী সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশ?

যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন নতুন অর্থনৈতিক জোটের লক্ষ্য আসলে কী, কী সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশ?

নাসির আহমাদ রাসেল :   ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির অর্জনের লক্ষ্যে একটি নতুন অর্থনৈতিক জোট...বিস্তারিত


ন্যাচারাল ডেমোক্রেসী - নতুন প্রজন্মের রাজনৈতিক দর্শন

ন্যাচারাল ডেমোক্রেসী - নতুন প্রজন্মের রাজনৈতিক দর্শন

বরকল (রাঙ্গামাটি) প্রতিনিধি :: :   শেখ মহিউদ্দিন আহমেদ   কেন বিশ্বের বর্তমান হতাশা? পৃথিবী এখন এক যুগ সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয...বিস্তারিত


কিশোর গ্যাং এখন বড় চ্যালেঞ্জ

কিশোর গ্যাং এখন বড় চ্যালেঞ্জ

মুহাম্মদ আমির হোছা্ইন :: : শিশু-কিশোররাই দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার। শিশু-কিশোররা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে বেড়ে উঠলেই দেশ ও জ...বিস্তারিত


ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা দেশের  অর্থনীতিতে  ভুমিকা রাখেছে

ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা দেশের  অর্থনীতিতে  ভুমিকা রাখেছে

আমাদের ডেস্ক : : সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের সোপানের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। করোনা মহামারির  না হলে বাংলাদ...বিস্তারিত


  জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে এগিয়ে আসি 'পরিবেশ সংরক্ষণের জ্ঞানার্জন করি 

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে এগিয়ে আসি 'পরিবেশ সংরক্ষণের জ্ঞানার্জন করি 

ডা.মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ : আজ আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস ২০২২।বিশ্বব্যাপী আজ রবিবার  (২২ মে) পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক জী...বিস্তারিত



সর্বপঠিত খবর

নেশনস কাপের ফাইনালে মুখোমুখি সালাহ-মানে

নেশনস কাপের ফাইনালে মুখোমুখি সালাহ-মানে

স্পোর্টস ডেস্ক : : ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের জায়ান্ট লিভারপুলের জার্সিতে খেলেন দুজনেই। আক্রমণভাগে দুজনের রসায়নে অলরেড...বিস্তারিত


ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠানো নিয়ে পশ্চিমাদের আবারও রাশিয়ার হুশিয়ারি

ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠানো নিয়ে পশ্চিমাদের আবারও রাশিয়ার হুশিয়ারি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : : রাশিয়ার মাটিতে আঘাত হানতে পারে— এমন সব অস্ত্র ইউক্রেনকে সরবরাহ করার বিষয়ে পশ্চিমা দেশগুলোকে হু...বিস্তারিত



সর্বশেষ খবর