ই-পেপার | শনিবার , ২৭ এপ্রিল, ২০২৪
×

মাইনুল এইচ সিরাজী’র-মুশির আশ্চর্য আয়না

সবার লেখায় যাদু থাকে না । সিরাজীর লেখায় সেটা আছে। শুধু কী যাদু ! চৌম্বকীয় কী যেন একটা ব্যাপার স্যাপার থাকে । একদম ঘাড় ধরে টেনে নিয়ে যাবে শেষ অবধি। পাঠক ইচ্ছে করলেও ঘাড় ঘুরিয়ে কিংবা ঘাড়ত্যাড়ামি করে উল্টোপথ খুঁজে পাবে না ।
সিরাজীর লেখার চরিত্রগুলো এমনই । পাঠক নিজেকে হারিয়ে ফেলেন চরিত্রদের মাঝে । তাদের সাথেই ঘুরে বেড়ান অলিগলি ।

সত্যি বলছি । আমারও  ওই দশা হয়েছে । 

“ মুশির আশ্চর্য আয়না “ পড়ে ।
কত যে রঙ্গ .. কত যে মুন্সিয়ানা জানেন সিরাজী !
নিরেট যাদুকর । আজিব ভেল্কিওয়ালা ।

বলছিলাম .. মাইনুল এইচ সিরাজীর কথা । নব্বই দশকের তোলপাড় করা এক গল্পকারের কথা । এখনো যিনি সমান গতিতে ছুটছেন । কথার যাদুতে মাতিয়ে রাখছেন ।
সম্প্রতি এক বসাতেই শেষ করেছি তার লেখা উপন্যাস  'মুশির আশ্চর্য আয়না'। 

চোখে মুখে সেই থেকে লেপ্টে আছে । যাদুর ছু মন্তর ছু ..।
পড়তে গিয়ে যেসব বই এক আধটু নাড়া টাড়া দেয়, ওটা নিয়ে লিখতে বসে যাই । কেন লিখি ?
ভালো লাগে তাই । মন বলে তাই ।
ভালোলাগা আর মন বলা এ দুইয়ের উর্ধে কিছু থাকতে হয়না। আমারও থাকেনা ।
তো ! বইটার কথা বলছি .. ।

তার আগে একটু করে বলতে চাই সিরাজী মানে মাইনুল এইচ সিরাজী কী জিনিস !
জিনিস শব্দটা ( পজিটিভলি) ব্যাবহার করার অগ্রাধিকারটুকুন বোধকরি আমার আছে ।
নব্বই দশকে মুঠোয় মুঠোফোন ছিল না । কাগজ- কলমের জোয়ার ছিল । সেই জোয়ারে ১০ নং সিগন্যালের মতো পাড়ভাঙ্গা একের পর এক ঢেউ তুলছিলেন একজন ।
কে আবার ?
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইনুল এইচ সিরাজী .. কননিকা সেভেন ।

দেশের প্রথম সারির দৈনিক , সাময়িকী , লিটলম্যাগ .. কোথায় ছিলেন না তিনি ! আমরা পাঠকেরা তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষায় থাকতাম , এই বুঝি আসলো নতুন কোনো লেখা !
যেখানে শিরোনামের নিচে লেখা থাকবে মাইনুল এইচ সিরাজী । আর লেখার শেষে “ কননিকা সেভেন “ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ।

সিরাজী ভাই এখন অবধি জানেন না … কতবার যে “কননিকা সেভেন” কটেজের দরোজায় গিয়েও টোকা না দিয়ে ফিরে এসেছি ।

আশ্চর্য ! ক্যাম্পাসে কাছাকাছি থাকলেও সেই সিরাজীভাইয়ের সাথে আমার প্রথম দেখা হলো … ক্যাম্পাস ছাড়ার দেড়যুগ পর । একেই বলে বোধহয় নিয়তি ।

কেন এটি ঘটল ? রহস্য কী ছিল ? আমি জানি না । 

সম্প্রতি পড়া তার উপন্যাস “ মুশির আশ্চর্য আয়না “ পড়তে পড়তে ভাবছিলাম , ওই আশ্চর্য আয়নার সামনে দাঁড়াতে পারলে বোধকরি উত্তরটা পাওয়া যেত ।
তারও কোন সুযোগ রাখেননি কৌশলী লেখক সিরাজী । উপন্যাসের শেষদিকে ঠিকঠাক আয়নাটা ভেংগে টুকরো টুকরো করে দিয়েছেন।
চতুর লোক … সাপ মেরে ধড়ে প্রাণ রাখবেন কেন ?

বই য়ের কথা কী আর বলবো !

আমি মুগ্ধতা নিয়ে এক বসাতে শেষ করেছি । যেমন চরিত্র সৃষ্টি তেমনি চরিত্রের ভাষা । সহজ সরল সাবলিল কথায় সিরাজী বলে গেছেন আমার আপনার ভেতরকার মানুষটির কথা ।
হলফ করে বলতে পারি । যখন পড়বেন নির্ঘাত নাড়া খাবেন বিবেকের দরোজায় । পাঠ শেষে আপনি আপনার মাঝে ক্ষনিকের তরে আপনহারা হবেন ।
দোকান থেকে ঘটনাচক্রে কিনে আনা মুশির আশ্চর্য আয়নাটি যখন সমাজের সাদা রঙের মানুষগুলোকে তাদের আসল অবয়ব চেনাতে থাকে , তখন পাঠক হিসেবে আপনার নিজেরও মনে হবে নিজে যদি দাঁড়াতাম ওই আয়নার সামনে !

অথবা একবারও মুখোমুখি হতে চাইবেননা ওই আয়নার ।
মুশির আশ্চর্য আয়নাটি মূলত বিবেকের আয়নায় রূপ নেয় একসময়।
বাকিটা। রহস্যই থাকলো । পড়ুন । আমি বলব .. উপন্যাসটি আপনার পড়া দরকার ।
মাইনুল এইচ সিরাজীর এই উপন্যাসটি একটি নীরিক্ষাধর্মী কাজ । সহজপাঠ্য । অন্তর্নিহিত তাৎপর্য ব্যাপক । এটি আত্ম উপলব্ধি মূলক চমৎকার এক উপন্যাস ।

কেন যে এটাকে কিশোর উপন্যাস বলা হলো ! আমি জানি না ।
যারা হুমায়ুন আহমেদ পড়েন তারা এই উপন্যাসের চরিত্রগুলোর মাঝে ওই রেশ পাবেন । দারুন হিউমার মেশানো বাক্যগুলো .. সংলাপগুলো আপনাকে মজা দিতে দিতে বিবেকের দরোজা অবধি নিয়ে যাবে ।
আমি অনেকটা নিশ্চিত আপনার ভালো লাগবে ।

এই প্রজন্মের যারা মাইনুল এইচ সিরাজীকে এখনো পাঠ করেননি , তাদের পাঠ করা উচিত । 

মাইনুল এইচ সিরাজী বাংলাদেশের সাহিত্যাকাশে একটি নক্ষত্র । শুধু সময়মতো জ্বলে ওঠার অপেক্ষায়… ।

গ্রন্থঃ মুশির আশ্চর্য আয়না, লেখক, মাইনুল এইচ সিরাজী, প্রকাশকঃ কথাপ্রকাশ, প্রচ্ছদঃ সব্যসাচী হাজরা, মূল্য ২০০/-

লেখকঃ শক্তিমান গল্পকার ও
ডিসি নর্থ ট্রাফিক