
ছড়া-কবিতাকে একসময় শুধুমাত্র ছোটদের পাঠ বলা হলে ও কালের বিবর্তনে ছড়া-কবিতা পাঠ কিশোর থেকে বড়দেরও মুগ্ধতা চরমে নিয়ে যায়। সে ছড়া যখন শিল্পমান সমৃদ্ধ ও অর্থবহ হয়। তেমনি অনেক গ্রন্থ আমরা ইতোমধ্যে হাতে পেয়েছি। তেমনি একটি ছড়া-কবিতা গ্রন্থ”মেঘলা দিনের মিষ্টি আকাশ “।
এ গ্রন্থের রচয়িতা গিয়াস উদ্দিন রূপম। এটি একটি ছড়াও কিশোর কবিতার গ্রন্থ। বাংলা ছড়া ও কিশাের কবিতার ভুূবনে একটি উজ্জ্বল নাম গিয়াস উদ্দিন রূপম।
দীর্ঘ দু’দশকের বেশি সময় ধরে দেশের জাতীয় দৈনিক ও সাময়িকীগুলােতে লিখে আসছেন দু’হাতে। এ গ্রন্থে মোট ২০টি ছড়া-কবিতা স্থান দিয়েছেন কবি। তাঁর ছড়ার বিষয় বৈচিত্রে যেমন নতুনত্ব রয়েছে ,তেমনি শৈলীতেও ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষা লক্ষণীয়। এ সময়ের ছড়া – কবিতা যেখানে গতানুগতিকতার বৃত্তে আবদ্ধ ,উঠোন ভাঙার কোনাে প্রত্যয় নেই ,সেখানে রূপমের ছড়া খানিকটা অন্যরকম। গতানুগতিক ছড়ার স্বর ও পুনর্বয়ান তাঁর মধ্যে কদাচিৎ দেখা যায় ।
মেঘলা দিনের মিষ্টি আকাশ গ্রন্থটিতে মেদহীন ছড়া লেখা কিংবা ছড়ায় কীভাবে অপ্রয়ােজনীয় শব্দ ছেটে দিতে হয় তা আমরা রূপমের ছড়ায় লক্ষ করি ।
লক্ষ করলে দেখি, বিষ্টি ভেজা গাঁ কবিতায়,
বিষ্টি ভেজা গাঁ
কোলাব্যাঙের ছা-
ডাকছে ঘ্যাঙর -ঘ্যাং
চলতে পথে পিছলে কারও
ভাঙছে জোড়া ঠ্যাং।
বিষ্টি ভেজা গাঁ
একলা বসে মা-
রাঁধছে পুঁটি-কই।
ঝোলামাখা ভাত খেতে সবাই
আয় না তোরা, সই!
মেধাবী এ ছড়াকার সমকালীন বিষয় , সমাজ বাস্তবতা ও কিশাের মনের ভাবনাগুলােকে অতি চমৎকারভাবে তাঁর ছড়া – কবিতায় ফুটিয়ে তােলার চেষ্টা করেন । তাঁর ছড়া অত্যন্ত স্বতঃস্ফূর্ত এবং বুনন চমৎকার । ছন্দের নির্ভুল ব্যবহার ও গতিময়তা তার ছড়ার অন্যতম বৈশিষ্ট্য । ঝরঝরে ছড়া লেখার জন্য রূপম ইতােমধ্যেই পাঠকের দৃষ্টি কেড়েছেন ।
রিমঝিমাঝিম বৃষ্টি কবিতায়
সকাল দুপুর
টাপুরটুপুর
রিমঝিমাঝিম বৃষ্টি।
আকাশ উপুড়
ঝাপুর ঝুপুুর
বন্ধ চোখের দৃষ্টি।
আমরা তার এ গ্রন্থে দেখতে পাই চমৎকার দু’টি লিমেরিক ও। তাও বর্ষা বিষয়ক,
টুপটুপাটুপ ও ঝরছে ঝাপুর ঝুপ।
আকাশ ফুঁড়ে নামছে বারি ঝরছে ঝাপুর ঝুপ
নদীর জলে দিচ্ছে খোকা ডুবের পরে ডুব
তাই না দেখে ছোট্ট খুকি
জানলা দিয়ে দিচ্ছে উঁকি
হাত- পা ছুঁড়ে বলছে বুঝি- পাচ্ছি মজা খুব।
মেঘ,আকাশ, বিজলী, বৃষ্টি কিংবা বর্ষার পুরো চিত্রই ফুটে ওঠে এসেছে মেঘলা দিনের মিষ্টি আকাশে। একেবারে বর্ষার নিপূণ কারুকাজে ঝলঝল করছে পুরো গ্রন্থটি। এ গ্রন্থ পাঠে কোনো পাঠক বর্ষার পুরো স্বাদ না নিয়ে যেতে পারবে না।
জল গিয়ে নদীতে মিশে বর্ষায় যেমন একাকার হয়, তেমনি পাঠক মেঘলা দিনের মিষ্টি আকাশ পাঠে বর্ষায় ডুবে যাবে গ্রীষ্ম থেকে শীতেও!
মেঘলা দিনের আকাশ” এ কবি চমৎকার ভাবনা ফুটে এনেছেন,মনের ভিতরের আকাঙ্ক্ষা গুলোকে সামনে তুলে নিয়ে এলেন,যেমন-
মেঘলা দিনের আকাশ,ওরে
সত্যি করে বল্
কোন শোকে তোর চোখ দুটিতে
নিত্য ঝরে জল?
পরীক্ষাতে তুই কি তবে
পাসনি সাধের ফল
এই নিয়ে কি পাড়ার মাঝে
নামছে হাসির ঢল?
ছড়া সাহিত্য ও শিশুসাহিত্যে এক ধরণের শক্তিমান পাঠক ও বোদ্ধা রয়েছে বলে শিশুসাহিত্যের মতো কঠিন ও হৃদয় দোলা দিয়ে মস্তিষ্কের অনু পরমানুতে ও কানে ছন্দের সুর তোলে ছড়াকার ও শিশুসাহিত্যিকরা গ্রন্থ রচনা করে যাচ্ছেন। এ গ্রন্থ পাঠে এটা সহজেই অনুধাবন করা যায়।
গিয়াস উদ্দিন রূপমের জন্ম ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া থানার ঘােপাল গ্রামে ১ জুলাই মো. আবু তাহেরে ও রোকেয়া বেগম এর ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। চার বােন , দুই ভাইয়ের মধ্যে রূপম তৃতীয় । শিক্ষাজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সফলতার স্বাক্ষর রেখে রূপম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতক ( সম্মান ) সহ প্রথম শ্রেণিতে ১৯৯৮ খৃষ্টাব্দে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন ।
পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি. থেকে মীর শামীমুজ্জামান এর প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণে প্রকাশিত এ গ্রন্থটির মূল্য ১৫০ টাকা।
লেখকঃ গিয়াস উদ্দিন রূপম
প্রকাশকঃ পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিঃ
প্রচ্ছদঃ মীর শামীমুজ্জামান
পরিবেশকঃ এন আর বি স্কলার্স পাবলিশার্স, ইউএসএ