ই-পেপার | মঙ্গলবার , ১৯ মার্চ, ২০২৪
×

নিষিদ্ধ ভায়োলিনে, নিষিদ্ধ কোনো কবিতা নেই-
আছে ভালোলাগার পংক্তি, ভিন্নমাত্রার কবিতা

প্রতিবাদের একটি ভাষা কবিতা, আবার কখনো কবিতা মানুষের মনের কষ্টও দূর করে দেয়। আর সে কারণে বোধহয় সাহিত্যের সকল শাখা থেকে কবিতার শাখাটা নান্দনিক। নান্দনিক বলেই হয়তো কবিতায় সবকিছু তুলে আনতে পারেন একজন কবি। কবি কানিজ জহুরাও তার নিষিদ্ধ ভায়োলিনে তুলে আনার চেষ্টা করেছেন মনের মাধুরী মিশিয়ে মন মস্তিষ্কে লুকিয়ে থাকা হাজারো ঘটনা,,,।

প্রদীপের নীচে অন্ধকারের মতো,নিষিদ্ধ ভায়োলিনে নিষিদ্ধ কোনো গল্প বা নিষিদ্ধ কোনো কবিতা নেই।

“শরীরের ভাঁজে আটকে থাকা শরীরে আয়োজন
ছাড়াই চলতে থাকে এক মহা উৎসব।
বিবস্ত্র আদিম সভ্যতায় এক প্রকৃতির সাথে মিশে যায় প্রেম।
রাতের শেষ লগ্নে প্রণয়ের খাতায় লেখা হয়
আরো একটা আদর মাখানো নগ্নতার গল্প।”

কবি কানিজ জহুরার নিষিদ্ধ ভায়োলিনে জীবনের বাস্তবতাগুলোই ফুটে এসেছে বেশির ভাগ কবিতায়।
বিবর্ণ এক অনুভূতিতে ভিজে ওঠে চোখের চোখের কোণ।
জানি এই নোনতা জলে লেগে আছো শুধু ” তুমি “
শুধু জীবনধর্মী নয় প্রেম ও বিরহের কাব্যও স্থান পেয়েছে গ্রন্থে।
আমি আর ভালোবাসা কবিতায় ” আমার কোনো অনুযোগ নেই, নেই অভিমান,
আমি উপেক্ষার বেদনায় নীল হওয়া আকাশ।
স্বপ্ন সুখের আলোকলতার গানে,
আমি হারিয়ে খুঁজি পুরনো আমাকে।
অবহেলা কাঁধে নিয়ে বঞ্চিত জীবনে
মুখর জনপদ ছেড়ে আমি নির্জন পথে।
তবে, সুখ বলে কারো নাম শুনেছিলাম,
সে কি এখনো জীবিত আছে!

সমকালীন যে ক’জন কবি তারুণ্যের জৌলুস নিয়ে অবিরাম লিখে যাচ্ছেন কবি কানিজ জহুরা তাদের মধ্যে অন্যতম। তাঁর কবিতার একটা স্বাতন্ত্র্যবোধ আছে চিন্তনে উৎকর্ষ, প্রকাশভঙ্গি,।সাবলীল এবং চেতনার আলাদা কথন।

নিষিদ্ধ ভায়োলিন এর কবিতা গুলো শুনতে শুনতে যেন অদৃশ্য এক শক্তি মন্ত্রমুগ্ধের মতো অন্তর্জগৎ থেকে টেনে বাইরে নিয়ে আসে, যা ভিন্নমাত্রার নব সংযোজন এবং পাঠক হৃদয় সিক্ত করে।

আমার পরিচয় আমি ১৬কোটি মানুষের হুঙ্কার।বায়ান্নতে কেড়ে নিল যারা মাতৃভাষা,
আমি তাদের তাণ্ডবলীলায় করেছি ঠাঁসা।
উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান,
এদেশ আবার করেছি উত্থান।
রক্ত দিয়ে ছিনিয়ে এনেছি রাঙ্গা প্রভাত।
কে আছিস আজ রুখবি আমায়?
আমার পরিচয় আমি ষোল কোটি মানুষের গান।

দেশপ্রেমের কবিতা, মানব প্রেমের কবিতা কী নেই নিষিদ্ধ বায়োলিনে?
অমর একুশ কবিতায়,
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণের স্বপ্নে যখন
বিভোর করেছে রাত্রি বাঙালি,
তুমি এসে জড়িয়ে নিয়েছ বুকে
ভেঙ্গে দিয়ে সকল দাসত্বের গ্লানি,
লক্ষ প্রাণের দাবি তুমি অমর একুশে ফেব্রুয়ারি।

তুলে এনেছেন সভ্যতার কতকিছুও, রাজনীতির আলো আঁধারীর চিত্র,
দারুণ গতিতে ছুটছে আজি সভ্যতা।
রাজনীতি আর মানবতার নামে
কাজে নিয়ে অরাজকতা।
সময়ের সাথে টেক্কা দিয়ে টোকাই হচ্ছে নেতা।
তালগোল মিলে চারদিক একাকার
উঠে বসে আছে হায়নার দল।
ভাঙছে মানবসত্তা বাড়ছে স্তব্ধতা,
অসহায় ভালোবাসা করে হাহাকার।
কোথাও কবিতায় চমৎকার আবেদন প্রেমের,

যদি কখনো তোমাকে আমার
ভীষণ ছুতে ইচ্ছে করে?
তুমি কি আমার ডাকে সাড়া দিয়ে
আমাকে বুকে জড়িয়ে নেবে,
নাকি অবহেলায় তাড়িয়ে দেবে?

কোন এক মন খারাপের রাতে
তোমার হাতযদি বলি,
চলো আমরা সমুদ্রস্নানে যাই।
তুমি কি আমায় নিয়ে যাবে?
নাকি একগাল হেসে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে
আমার স্বপ্নগুলোকে দুমড়েমুচড়ে দেবে??

আবার কবিতার কোথাও বলেছেন,
আমি ভিখারি নই যে
ধার করা প্রেমের বুলি শোনাব তোমাদের।
প্রতিদিন কাকডাকা ভোরে
আমি বুকেও জন্ম নেয় বিষাক্ত কাঁটালতা।
আমিও পুড়ি সেই দহনে
যাকে তোমরা প্রেম বলো।
কিংবা,
সিগারেট ঠোঁটে গুঁজে এক ফু দিয়ে
চুষে নিই সবটুকু বিষ!
সেকি শুধুই বিষাদসিন্ধু?
আমারই বা দুঃখ কম কিসে?
দৈন্যতা বুকে চেপে দোসর হয়েছি বিলাসিতার,
সাদামাটা জীবনকে ছায় দিয়ে ঢেকে
রঙ শ্রবণ করেছি কাতরতা বুকে।

কবিতায় অন্তগূঢ়ে বেজে ওঠে প্রেম-বিরহ, দ্রোহ এবং যাপিত জীবনের অঅনাড়ম্বর তিক্ততা। যে প্রেম মানুষের আরাধ্য প্রাথর্না,যে প্রেম কুয়াশার মতো অপেক্ষায় ভিজিয়ে রাখে চোখ।
সমসাময়িক তরুণ কবিদের মধ্যে কানিজ জহুরা সম্ভাবনাময় একজন। পাঠকের অকৃত্রিম ভালোবাসা পেলে এই প্রতিভা হয়তো মহাকাল পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারেন।

নিষিদ্ধ ভায়োলিনের প্রতিটি কবিতার আলাদা বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। শব্দচয়নেও কানিজ জহুরা আন্তরিকতার নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। ব্যবহার করেনি কঠিন ও জটিল শব্দসম্ভার। সচরাচর ও পরিচিত শব্দগুলোতেই কবিতায় গেঁথেছেন নিষিদ্ধ ভায়োলিনের সংসার। বলা যায় শব্দশিল্পের মুক্তবাজারে আরো একটি জ্বলন্ত প্রদীপ নিষিদ্ধ ভায়োলিন।

তেজস্বী যন্ত্রণা,নৈকট্যের সাধনা,ফেরারী পাখি,যৌবনের দৌঁড়,কলঙ্কদেবী,বহুব্রীহি ইচ্ছে, অন্তঃসারশূন্যতা,দহন,আলিঙ্গন, নিষিদ্ধ ভায়োলিন,দীর্ঘশ্বাস, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া, কথার জলসহ মোট ৫৩টি চমৎকার কবিতা রয়েছে এ গ্রন্থটিতে। প্রতিটি কবিতার শব্দচয়ন,অক্ষরবিন্যাস মনে দাগ কাটার মতোই। আশা ও বিশ্বাস কবিতাপ্রেমী দু’বাংলার পাঠকের আত্মার খোরাক নিষিদ্ধ ভায়োলিন।

ফারজানা আক্তার চাঁদনীর প্রচ্ছদে হরিৎপত্র প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত নিষিদ্ধ ভায়োলিন নিঃসন্দেহে তারুণ্যের হৃদয় ছুঁয়ে যাবে। সাহিত্যের উজ্জল নক্ষত্র হয়ে উঠুক কবি কানিজ জহুরা।

লেখকঃ কানিজ জহুরা
প্রকাশকঃ ফারুকী ওমর
হরিৎপত্র প্রকাশন
প্রচ্ছদঃ ফারজানা আক্তার চাঁদনী
মূল্যঃ ১৬০ টাকা।

লেখকঃ কবি ও সাংবাদিক