ই-পেপার | মঙ্গলবার , ১৯ মার্চ, ২০২৪
×

সাহিত্য পুরস্কারে নানান তেলেসমাতি

সেকালের সাহিত্য পুরস্কারঃ

একসময় সাহিত্য পুরস্কারের কদরের মাত্রা ছিল আকাশ ছোঁয়া। পাকিস্তান আমলে বাংলা একাডেমি ছাড়াও আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার, আলাউল সাহিত্য পুরস্কার এ রকম অনেক পুরস্কারের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে। এসব পুরস্কার পেয়ে লেখক তাঁর সাধনার কাজে আরও নিবিষ্ট হতেন। এসব পুরস্কারে নিবেদিত প্রাণ একটি নিরপেক্ষ বিচারক মন্ডলীও থাকত এবং বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ হয়ে তাঁরা দেশের আনাচে কানাচ থেকে কষ্টিপাথরে যাচাই বাছাই করে যোগ্য লোকটিকে পুরস্কারের মালাটি পরিয়ে দিতেন।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও পুরস্কারের সেই সিলসিলাটি দীর্ঘদিন চালু ছিল। কিন্তু সময় যতই গড়াতে থাকল সাহিত্যিকদের রাজনৈতিক বিভাজনও বেড়ে গেল। কোনো কোনো পুরস্কার ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে গেল। পুরস্কারের প্লাটফরমগুলো রাজনীতির নির্মম হাতিয়ারে পরিণত হলো, পুরস্কারগুলোর অবস্থাও বেহাল হতে শুরু করলো এবং একসময় বেহালের মাত্রাও বেড়ে গেল।

এ কালের সাহিত্য পুরস্কারঃ

সাহিত্য পুরস্কারের নামে ভণ্ডামি, অনৈতিকতা, চাওয়া-পাওয়া, বিনিময়, অর্থলোভ অনেককিছুই এখন যুক্ত হয়ে গেছে। এখন পুরস্কারের প্লাটফরমগুলো ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে যাওয়ার কারণে ব্যক্তিই ঠিক করেন তিনি পুরস্কার কাকে দেবেন। কাকে দিলে তিনি লাভবান হবেন। কাকে দিলে বিনিময়ে তিনি নিজেও কিছু পাবেন। এখানে যোগ্যতারও কোনো বালাই-ফালাই থাকে না। এখানে হিটলারি কায়দায় পুরস্কার দেওয়া হয়। এখানে পুরস্কারকর্তা মহা স্বেচ্ছাচার হয়ে যান। তাঁর বিচার-বুদ্ধি সাত আসমানে গিয়ে আহাজারি করে।

পুরস্কারের ভেতরের খেলাঃ

এখন পুরস্কার প্রদানের ধরণ পাল্টিয়েছে। পুরস্কারের জন্য কোথাও কোথাও বই আহ্বান করা হয়। একজন লেখক থেকে ৪/৫ কপি বই গ্রহণ করা হয়। তারপর এখানে চলে কর্তাব্যক্তির তেলেসমাতি খেলা। ধরুন পুরস্কার দাতার কাছে ৫০ লেখকের বই পড়েছে। কর্তাব্যক্তি ওখান থেকে তাঁর পছন্দের ৩ জন লেখকের বই বাছাই করে তাঁর আস্থাভাজন তথাকথিত বিচারকের কাছে বইগুলো নাম্বারিং করতে বলেন। তাঁদের কাছে খবরাখবর নেন কে কতো নম্বর পেয়েছে। আবার তাঁর পছন্দের লোকটি যদি নম্বর কম পান তাহলেও তিনি বলে দেন নম্বর উচ্চ মার্গে নিয়ে যেতে। আস্থাভাজন বিচারক কর্তাব্যক্তিকে সন্তুষ্টির বন্ধনে আবদ্ধ রাখতে তা-ই করে চলেন।

পুরস্কারের সাথে আর্থিক লেনদেনটা এখন

খোলামেলা চাউর হয়ে আছে। অ-লেখকেরা গোপন গোপনে টাকা দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে পুরস্কার। কর্তাব্যক্তি মহিলাদেরকে পুরস্কার দিতে নানান বিষয় বিবেচনা করেন। তিনি অনিন্দ্য সুন্দরী কিনা, তাঁর স্বাস্থ্য ফুলশ্রী কিনা, অর্থবিত্তে তিনি টইটম্বুরে কিনা, তিনি ডাকা মাত্রই সাড়া দেবেন কিনা, এ রকম আরও অনেক বিষয়-আশয় আছে যা ভুক্তভোগীরা ছাড়া কেউ বলতে পারে না।

আশার বাতিঃ

এতো কিছুর পরও কিছু কিছু ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আছে যারা নিজেদের নৈতিকতার স্খলন থেকে বেঁচে থাকার লড়াই করেন। বিশাল অন্ধকারেও তাঁরা বাতি ধরে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকেন। ক্ষয়ের ভয়াবহ মাত্রা তাঁদেরকে ছুঁতে পারে না। বাইন মাছের মতোই নিজেদের কাদাহীন রাখতে সচেষ্ট থাকেন। এই ক্ষীণ আলোয় একদিন হয়তো আলোকিত হবে সাহিত্যঙ্গন, আলোকিত হবে সমাজ।

লেখক-শিশু সাহিত্যিক