
মাঝেমধ্যে নিজের চারপাশটা বড্ড বেশি অচেনা-অপরিচিত লাগে। কখনো কখনো নীরবতার চাদরে ঢেকে যায়। মনে হয় কোথাও কেউ নেই। মনে হয় বিষাদময় একটা দুনিয়া। আবার বিষাদতা কেটে যায়, আলো আসে, অন্ধকার মিলিয়ে যায়। পাখিরা উড়ে বেড়ায় নীল আকাশে, ভুূবন জুড়ে নতুন পুষ্প ফুটে। তবুও আমাদের মন মাঝেমধ্যে তেতো থেকে যায়। কারণ আমরা মিছে দুনিয়ায় মিছে মায়ায় পড়ে ভুল কিছু মানুষের মোহে আটকা পড়ে আছি। আমাদের রঙ-ঢং থাকে বিশেষ কিছু মানুষকে ঘিরে। আমরা তাদের হাসির সঙ্গে হাসি, তাদের মন খারাপের দিনে মন খারাপ করে হুতুমপ্যাঁচা সেজে বসে থাকি। আবার তাদের বিয়োগবেলায় হাউমাউ করে কাঁদি।
আমরা মানুষ সত্যিই বিস্ময়কর বিচিত্র ! নিজেকে নানা বর্ণে সাজাতে গিয়ে কখনো কখনো সস্তা বস্তু বানিয়ে ফেলি। আমাদের আবেগ, আপ্লুত, অনুভূতি অন্যের কাছে বন্ধক দিয়ে রেখেছি। আর এটাই আমাদের সবচে আলোচিত বড় একটি ভুল। আমরা হয়ে যাই তাদের কাছে পরগাছার মতো। তাদের হৃদয়ে আমাদের হৃদয় আশ্রিত হয়ে বেঁচে থাকে। তাই তারা নিজের ইচ্ছেমতো আমাদের নাচাতে পারে। নাকে দড়ি দিয়ে নাচায়।
আমরা বারবার ভুল মানুষের প্রেমে পড়ি। ভুল মানুষকে নিজের ভাবি। ভুল মানুষের জন্য কাঁদি। ভুল মানুষের জন্য যুগের পর যুগ অপেক্ষায় বুক বাঁধি।
সে আসবে বলে নিজের থেঁতলিয়ে যাওয়া মনটাকে ধুয়েমুছে আবার সাফ করি। তাকে আবার হৃদয়ের সিংহাসনে বসাতে হবে বলে ভুল আয়োজনে ফের মত্ত হই। আদমের পূর্ব ভুলের মতো আমরা বারবার হয়তো ভুল করেই যাবো। আজও করছি, সামনের দিবস রজনীতেও করবো। ইচ্ছে হলেও করবো, ইচ্ছে ডিঙিয়ে গিয়েও আবার ভুল করবো।
কিন্তু, ভুলের পর কেউ কী আমাদের অভিযোগ-অনুযোগ তোয়াক্কা না করে বলেছে— ‘এই আমি কখনোই তোমার ভুল কেউ ছিলাম না, তুমি সঠিক মানুষের মোহেই পড়ে আছো, আমিই তোমার সেই মানুষ, আমি তোমার হতে চাই, আমি তোমার সাথে তোমার কষ্ট ভাগাভাগি করতে চাই, তোমার কষ্টে কাঁদতে চাই। আমার শাড়ির আচঁলে তোমার আঁখি মুছে দিতে চাই। তোমাকে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ঘুম পাড়াতে চাই। ভুলের তকমা বাদ দিয়ে আমাকে ভালোবাসবে তো, আমি বাকিটা সময় তোমাকে ঘিরেই থাকতে চাই।’ কেউ বলেনি! কেউ হয়তো কোনদিন বলবেও না। তবুও আমরা বারবার ভুল করেই যাবো। কারণ, আমরা নিজের অন্তরে মিছে আবেগ পুষি।
লেখক: কবি ও প্রাবন্ধিক