ই-পেপার | বৃহস্পতিবার , ২ মে, ২০২৪
×

সেন্টমার্টিনে ভেসে আসা সে ‘ভুতুড়ে জাহাজ’ গিলে খাওয়ার পাঁয়তারা: নেপথ্যে সাবেক ১ কাউন্সিলর

বেঞ্জামিন রফিক :

টেকনাফের সাবেক এক কাউন্সিলর প্রশাসনের কতিপয় দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তার যোগসাজশে ২০২২ ইং এর অক্টোবরে ঘুর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের সময় সারাদেশে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হওয়া সেন্টমার্টিনের ছেঁড়াদ্বীপে ভেসে আসা ভূতুরে জাহাজটি অবশেষে গিলে খাওয়ার পরিকল্পনা চুড়ান্ত করে রেখেছেন মর্মে গুরুতর তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, যেটিকে ভুতুড়ে জাহাজ বলা হচ্ছে সেটি মূলত সিঙ্গাপুরের পতাকাবাহী বার্জ। যার নাম ‘বার্জ এম আর ৩৩২২’। এটি মেরিনা টোয়েজ প্রাইভেট লিমিটেডের মালিকানাধীন। এটির দৈর্ঘ্য ১১০ দশমিক ৬ মিটার এবং প্রস্থ ৩০ মিটার। এটি বাংলাদেশে এর আগেও অন্তত চারবার বিভিন্ন পণ্য নিয়ে এসেছিল সংশ্লিষ্ট একাধিক ওয়াকিবহাল মহল জানিয়েছিল, এটি জাহাজ নয়; এটাকে বলে বার্জ। বার্জ হলো মালবাহী একটি নৌযান যেটিকে অন্য কোন নৌযান বা টাগবোট দিয়ে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। বার্জের সাধারণত নিজস্ব ইঞ্জিন থাকে না।

এটার ওপরে খোলা, সাইডে রোলিং দেওয়া। ভেতরে ছোটখাটো স্টেডিয়ামের মতো মনে হবে। বিভিন্ন রকম কার্গো এটাতে লোড করা হয়। এটি জনশূন্য থাকার কারণ হচ্ছে এটিতে মানুষ থাকার কোনও কেবিন নেই। এটাকে সামনে থেকে মোটা রশি দিয়ে টেনে নিয়ে যায় একটি ছোট জাহাজ। যেটি টেনে নিয়ে যায় সেটিকে বলে টাগ। পুরো ব্যাপারটাকে বলে টোয়িং। এত বড় বার্জটিকে সহজেই ওই জাহাজ টেনে নিয়ে যেতে সক্ষম।’

সেন্টমার্টিন দ্বীপের তৎকালীন কোস্টগার্ডের স্টেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট রাগিব তানজুম জানিয়েছিলেন, বার্জটি একাধিকবার বাংলাদেশে এসেছে। তারই ধারাবাহিকতায় সোমবার বিদেশে চলে যাওয়ার সময় সিত্রাংয়ের প্রভাবে উত্তাল সমুদ্রে ভেসে সেন্টমার্টিন দ্বীপে ভেসে এসেছে। সর্বশেষ বার্জটি নিয়ে যাওয়ার জন্য আট ইন্দোনেশিয়ান নাগরিক সেন্টমার্টিন দ্বীপে অবস্থান করেছিলেন। কোস্টগার্ড সদর দপ্তরের নির্দেশে এটি নিয়ে যাওয়ার জন্য সহযোগিতা করেছিল। এখন আর তাদের কোন খবর নেই।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তালিকা সুত্রে জানা যায়, জার ওয়ার্ল্ড লজিস্টিকস নামের একটি স্থানীয় এজেন্ট বার্জটিকে ভাড়া করে বাংলাদেশে এনেছিল। জার ওয়ার্ল্ড লজিস্টিকসের কর্মকর্তা জিন্নাত আলী জানান, মালামাল খালাস করে ক্যাপ্টেন এবং ক্রুসহ জাহাজটি দুদিন আগে চট্টগ্রাম বন্দর ছেড়ে চলে গেছে। বন্দর ছেড়ে চলে যাওয়ার পর কী হয়েছে সেটা আমাদের জানা নেই।

এদিকে চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, বার্জটি চলতি বছর একাধিকবার বাংলাদেশে এসেছে। এটি মালয়েশিয়ার বন্দর থেকে ৯ হাজার টনের বেশি পাথর বহন করে বাংলাদেশে এনেছে। এর আগে সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দারা জানান, সোমবার দুপুরে সাগর থেকে জাহাজটি ধীরে ধীরে তীরের দিকে ভেসে আসে। এতে অনেক কন্টেইনার ও অন্যান্য মালামাল রয়েছে। দ্বীপের বাসিন্দা আব্দুল আজিজ বলেন, প্রথমে এটিকে পর্যটকবাহী মনে করেছিলাম। পরে কাছে গিয়ে দেখি, এটি কন্টেইনারবোঝাই জাহাজ। সেখানে কোনো মানুষের দেখা মেলেনি। পরে আমরা স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েছি।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নজির আহমেদ বলেন, মঙ্গলবার জাহাজটিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য কয়েকজন বিদেশি মানুষ এসেছে। তারা জানিয়েছেন, এটি মালামাল পরিবহনের জাহাজ। মালামাল রেখে ফেরত যাওয়ার সময় ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে সেন্টমার্টিন তীরে ভেসে আসে।

সংশ্লিষ্ট ওয়াকিবহাল মহল বলছেন,সামগ্রিক বিষয়টি খতিয়ে আস্ত জাহাজখেকো ভংয়কর এক রাক্ষুসে চক্রের বিরুদ্ধে আইনানুগ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও নেপথ্যে থাকা সাবেক এই কাউন্সিলরকে খতিয়ে দেখা শুধু সময়ের দাবী।