ই-পেপার | শনিবার , ২৭ এপ্রিল, ২০২৪
×

জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিটি মানুষের জন্য হুমকি স্বরূপ – বিভাগীয় কমিশনার

নগরীর রয়েল রোডের সিনেমা প্যালেস সংলগ্ন চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে ‘জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতার প্রতি স্বাস্থ্যখাতের প্রতিক্রিয়া’ বিষয়ক ২ দিন ব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালা আজ ৩ মে বুধবার সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল ২ মে মঙ্গলবার সকাল ১০টায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কর্মশালার শুভ উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড. মোঃ আমিনুর রহমান এনডিসি।স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের স্বাস্থ্য ইকোনমিকস ইউনিট কর্মশালার আয়োজন করেন।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের স্বাস্থ্য ইকোনমিকস ইউনিটের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ও লাইন ডাইরেক্টর ড. মোঃ এনামুল হকের সভাপতিত্বে এবং জিএনএসপি ইউনিটের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. ফাহমিদা নার্গিসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের প্রকল্প পরিচালক (অ্যাসেট) ও অতিরিক্ত সচিব আবু মমতাজ সাদ উদ্দিন আহমেদ, চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মোঃ মহিউদ্দিন, পরিবার পরিকল্পনা চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক গোলাম মোঃ আজম, চট্টগ্রাম ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি ও চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী। প্রশিক্ষণ কর্মশালায় বিভিন্ন পর্বে অংশ নেন জিএনএসপি ইউনিটের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. এজিএম মাশুকুর রহমান, প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মোঃ সাইদুর রহমান খান, ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মোঃ শওকত হোসেন খান, জিবিভি’র ইউএইচএফপিও ডা. নুর রিফাত আরা ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের লেকচারার (ফরেনসিক মেডিসিন) ডা. ফাহমিদ নার্গিস। কর্মশালায় বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতাল/স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার, মেডিকেল অফিসার, পুলিশ কর্মকর্তা, নার্স, মিডওয়াইফ ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ অংশ নেন।

কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড. মোঃ আমিনুর রহমান এনডিসি বলেন, যৌন হয়রানি একটি অমার্জনীয় অপরাধ। যৌন হয়রানি ও জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতা সমাজের প্রতিটি মানুষের জীবনের জন্য হুমকি স্বরূপ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের চরম রূপ। জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে বাংলাদেশ বহু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। শুধু সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এই প্রতিরোধের আন্দোলন মজবুত করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সমাজের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে। গ্রামীণ জনগোষ্ঠিকে এই বিষয়ে সচেতন ও সকল প্রতিষ্ঠানকে একযোগে সমন্বিত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে।

তিনি বলেন, বিভিন্ন কারণে বিশ্বজুড়েই নারীর প্রতি সহিংসতা ও বৈষম্য বেড়ে গেছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সবাইকে সহিংসতামুক্ত ও সমতার সমাজ গঠনে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতা রোধে স্বেচ্ছায় সকল নারীর প্রতি নারী এবং পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনতে হবে। কর্মক্ষম নারীকে বেশি করে অর্থনৈতিক কাজে সম্পৃক্ত করার পাশাপাশি নারীর কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। আর্থ-সামাজিক ক্ষমতায়ন করতে পারেলে নারীর প্রতি সহিংসতা কমবে। জেন্ডার সহিংসতা প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট সকলকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে একযোগে কাজ করার আহবান জানান তিনি।

কর্মশালায় বিশেষ অতিথিবৃন্দরা বলেন, যখন আমরা জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা ও ধর্ষণ প্রতিরোধে কাজ করি, তখন নির্যাতনের শিকার নারীকে আমাদের এমনভাবে প্রাথমিক সেবা দিতে হবে, যাতে সে সমন্বিতভাবে একসঙ্গে মানসিক, চিকিৎসা, শারীরিক, কাউন্সেলিং আইনি সেবা পায়। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে পুরুষালি আচরণ সম্পর্কে যে ভুল ধারণাগুলো পুরুষের মধ্যে বিদ্যমান, নারী-পুরুষের বৈষম্য এবং নারীদের নীচু করে দেখার যে মনোভাব, সেগুলোকে ভাঙতে হবে, প্রতিবাদ করতে হবে।

তারা বলেন, সরকারি-বেসরকারি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ ও উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতা মোকাবিলা, ধর্ষণের মূল কারণ খুঁজে বের করা ও ধর্ষণ বন্ধের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এসডিজি লক্ষ্য অর্জনে নারীর প্রতি জেন্ডার ভিত্তিক নির্যাতন শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যে মাঠ পর্যায়ের সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। সবাই একসঙ্গে কাজ করলেই আমাদের মা, বোন, মেয়েসহ প্রতিটি নারী ও মেয়ে শিশু সমান সুযোগ পেয়ে বেড়ে উঠে সমৃদ্ধ জীবন গড়তে পারবে।

প্রশিকক্ষণ কর্মশালায় অন্যান্য বক্তারা বলেন, সহিংসতা ও ধর্ষণের জন্য কোনোভাবেই নারী দায়ী নয়। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে খুবই উদ্বেগজনক বিষয় হচ্ছে-ধর্ষণের শিকার নারীকে ন্যায়-বিচার ও সুরক্ষা দেওয়ার বদলে আদালতে তার শ্লীলতা ও চরিত্র নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়। ধর্ষণের শিকার নারীকে প্রকাশ্যে তার চরিত্র ও ঘটনার পেছনে তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, যা নারীর জন্য চরম অবমাননাকর এবং এর মাধ্যমে আরেক দফায় তার মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়।

বক্তারা বলেন, অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সেবার ক্ষেত্রে, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টার এবং ২৪ ঘণ্টা জাতীয় হেল্পলাইন সেবা চালু করেছে। সম্প্রতি জাতিসংঘ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সেবা প্রদানকারীদের জন্য জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতা ও ধর্ষণের শিকার নারীদের সেবা ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করেছে। সরকারি হাসপাতালগুলো যাতে জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতায় দ্রুত সাড়া দেয় এবং সেবা প্রদানকারীরা যাতে ধর্ষণের শিকার নারীদের তাৎক্ষণিক ও প্রয়োজনীয় সেবা দক্ষভাবে দিতে পারে, সে জন্য স্বাস্থ্যসেবা খাতকে আরও আন্তরিক হতে হবে। একই সঙ্গে জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার শিকার সবার জন্য আইনি সেবা ও সুরক্ষা বৃদ্ধির জন্যও আমরা কাজ করছি। এসব সেবা সর্বত্র সহজপ্রাপ্য করা আবশ্যক, যাতে যার যখন প্রয়োজন, তখনই সেবা নিতে পারে।