ই-পেপার | শনিবার , ২৭ এপ্রিল, ২০২৪
×

সাতকানিয়ায় পাহাড়ি ঢলে ভয়াবহ বন্যা,পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষ

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বিভিন্ন ইউনিয়নে ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ভয়াবহ বন্যার দেখা দিয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে বেশিরভাগ এলাকা। পানিতে আটকা পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। বন্ধ রয়েছে বান্দরবান ও কক্সবাজার সড়কের সব ধরনের যান চলাচল।

মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) দুপুর পর্যন্ত খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার বেশির ভাগ এলাকার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

কেরানীহাট-বান্দরবান সড়কের বিভিন্ন স্থান তলিয়ে যাওয়ায় বান্দরবারের সাথে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। শঙ্খ ও ডলু নদীতে পানি বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং তীর ভাঙা জোয়ারে তলিয়ে গেছে ফসলের ক্ষেত, মৎস্য প্রজেক্ট ও পুকুর। কেরানীহাট-সাতকানিয়া-বাশঁখালী সড়কের বিভিন্ন স্থান বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।

এদিকে সাতকানিয়া থানা, উপজেলা ভূমি অফিস, শাহী জামে মসজিদ, সাতকানিয়া আদালত ভবন, কেরানীহাট বাজার, ক্লিনিক, বোয়ালিয়া পাড়া, সামিয়ার পাড়াসহ আশপাশের এলাকায় পানি থৈ থৈ করছে। উপজেলার বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ সড়ক চার-পাঁচ ফুট উচুতে পানি জমেছে। উপজেলার কেঁওচিয়া, তেমুহানি, ছদাহা, ঢেমশা, বাজালিয়া, কালিয়াইশ, ধর্মপুর, পুরানগড়, নলুয়া, পশ্চিম ঢেমশা, এওচিয়া, সোনাকানিয়া, চরতি, কাঞ্চনা ও সাতকানিয়া সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। অনেক এলাকার লোকজন ইতোমধ্যে নৌকায় যাতায়াত করছে। উপজেলা সদরের সাথে অনেক এলাকার লোকজনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বেশিরভাগ নিচু এলাকার ঘরগুলো বন্যার ডুবন্ত।

বন্যার পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে শঙ্খ ও ডলু নদীর ভাঙনের ফলে নদীর তীরবর্তী অনেক ঘরবাড়ি নদীর গর্ভে বিলীন হওয়ার পথে। কেরানীহাট-বান্দরবান সড়কের দস্তিদারহাট, আমতলা, সত্যপীরের মাজার, বাজালিয়ার মাহালিয়া, ডেলীপাড়া, বাড়িঘাটাসহ বিভিন্ন এলাকায় সড়কের ওপর তিন-চার ফুট উঁচু হয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বিরতিহীন বৃষ্টির ফলে বন্যার পানি ঘণ্টায় ঘণ্টায় বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কেঁওচিয়ার আব্দুর রহিম বলেন, গতরাত থেকে পানি বেড়ে গেছে। আমার ঘরসহ দুই গোলাভর্তী ধান ডুবন্ত। বিদ্যুৎ নাই। রান্না করতে পারছে না। আমরা বাড়ির পাশে উঁচু জায়গায় অবস্থা নিয়েছি। খুব ভয়ে আছি। সাতকানিয়ার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মনির উদ্দিন বলেন, আমাদের এলাকার অবস্থা খুবই খারাপ। বন্যার পানিতে বেশিরভাগ বাড়িঘর ডুবে গেছে। এলাকায় বিদ্যুৎ এবং মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই। প্রশাসনের সহায়তা দাবি।

দোহাজারী হাইওয়ে থানার খান মোহাম্মদ এরফান বার্তা২৪.কমকে বলেন, টানা বৃষ্টির পানিতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চন্দনাইশের কসাইপাড়া, সাতকানিয়ায় কেরানিহাট ও আশেপাশের এলাকা এবং লোহাগাড়া উপজেলার কিছু এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। একারণে এই মহাসড়ক দিয়ে যানবাহন চলতে পারছে না।বিচ্ছিন্নভাবে দুয়েকটি বাস চলাচল করছে। সেগুলোতে আমাদের সদস্যরা যথাসাধ্য সহযোগিতা করতেছে৷

তবে বন্যার গতকাল থেকে এখন পর্যন্ত কোন ধরনের সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেনি বলে জানান ওসি। এদিকে বন্যা পরিস্থিতি জানতে সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে কয়েকবার ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও সাড়া পায়নি। তবে বন্যায় ওই এলাকার বেশিরভাগ এলাকা বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হওয়ার খবর জানা গেছে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হুছাইন মুহাম্মদ বলেন, বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকায় প্রশাসনের ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়া শহরে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরতদের নিরাপদে স্থানান্তর এবং তাদের খাবার দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে চট্টগ্রাম ও বান্দরবানের বন্যা কবলিত এলাকায় ইতিমধ্যে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।