ই-পেপার | বুধবার , ৮ মে, ২০২৪
×

চন্দনাইশে সাংবাদিক আইয়ুব মিয়াজি’কে পিটিয়ে জখম করার প্রধান ২ আসামী গ্রেপ্তার

চট্টগ্রামের চন্দনাইশে অবৈধভাবে পাহাড় কাটা নিয়ে সংবাদ প্রকাশের প্রেক্ষিতে সাংবাদিক আইয়ুব মিয়াজি’কে পিটিয়ে দোতলা হতে নিক্ষেপ করে গুরুতর আহত করার প্রধান ২ আসামীকে আটক করেছে ‘চট্টগ্রাম র‌্যাব-৭’ ।

‘চট্টগ্রাম র‌্যাব-৭’, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, বর্ণিত হামলার সাথে জড়িত প্রধান দুই আসামী আলাউদ্দিন এবং ফারুক আইনশৃংখলার বাহিনীর নিকট হতে গ্রেফতার এড়াতে ঢাকা মহানগরীর কমলাপুর এর সর্দারপাড়া কলোনীর একটি ব্যাচেলর মেসে আত্মগোপন করে রয়েছে।

উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে র‍্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৭, চট্টগ্রামের একটি আভিযানিক দল অদ্য (১০ এপ্রিল) সোমবার, সকালে বর্ণিত স্থানে অভিযান পরিচালনা করে ১ম আসামী মোঃ আলাউদ্দিন (৩৫), পিতা-আব্দুল মোনাফ, সাং দোহাজারী, থানা-চন্দনাইশ, জেলা-চট্টগ্রাম এবং ২য় আসামী মোঃ ফারুক (২৬), পিতা-আবদুল ছবুর, সাং-পূর্ব দোহাজারী, থানা-চন্দনাইশ, জেলা-চট্টগ্রামদ্বয়কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা বর্ণিত হামলার সাথে জড়িত ছিল বলে অকপটে স্বীকার করে।

গ্রেফতারকৃত আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় বর্ণিত ঘটনার পর পরই তারা আইন শৃংখলা বাহিনীর নিকট হতে গ্রেফতার এড়াতে চট্টগ্রাম হতে পালিয়ে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে থাকে। সর্বশেষ তারা ঢাকা মহানগরীর কমলাপুর এর টিটি পাড়া রোড এর সর্দারপাড়া কলোনীর একটি ব্যাচেলর মেসে আত্মগোপন করে এবং সেখান হতে গ্রেফতার হয়।

উল্লেখ্য, গত ০৪ এপ্রিল’২৩ বিকেল আনুমানিক ৩ ঘটিকায় চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ উপজেলার স্থানীয় সাংবাদিক আইয়ুব মিয়াজি (৩৪) এর উপর কতিপয় দুস্কৃতিকারী হামলা চালিয়ে পিটিয়ে জখম করে দোতলা হতে নিক্ষেপ করে গুরুতর আহত করে। ভিকটিম আইয়ুব মিয়াজীর দোহাজারী পৌরসভা এলাকায় আর কে প্লাজার দোতলায় একটি কম্পিউটার ট্রেনিং ইনস্টিটিউট রয়েছে।

গত মঙ্গলবার প্রকাশ্যে তার নিজ প্রতিষ্ঠানে দুবৃত্তরা এ হামলা চালায়। পরবর্তীতে গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।

ভিকটিম এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমের বরাতে জানা যায় যে, অবৈধভাবে পাহাড় কাটা নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে আইয়ুব মিয়াজীর ওপর দুর্বৃত্তরা এ হামলা চালায়। পাহাড় কাটার বিষয়ে আইয়ুব মিয়াজী ধারাবাহিকভাবে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন করেছিলেন। ভিকটিমের ভাষ্যমতে এসব সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর স্থানীয় ব্যবসায়ী মোঃ আলাউদ্দিন ও মোহাম্মদ ফারুক তাঁকে হুমকি দেন।

পরবর্তীতে দোহাজারীর স্টেশন রোডের আরকে প্লাাজায় অবস্থিত তার কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গত মঙ্গলবার বিকেল আনুমানিক ৩ ঘটিকায় আলাউদ্দিন, ফারুকসহ ১০ থেকে ১২ জন ব্যক্তি প্রবেশ করেন। তাদের সঙ্গে একজন নারীও ছিলেন। হামলাকারীরা এসে অতর্কিতভাবে আইয়ুব মিয়াজী’কে লাঠিসোঠা, ধারালো দা, হকস্টিক দিয়ে মারধর করা শুরু করেন। একপর্যায়ে তাঁকে দোতলা থেকে ফেলে দিয়ে গুরুতর আহত করে। আইয়ুব মিয়াজী বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

পরবর্তীতে বর্ণিত সাংবাদিককে দোতলা থেকে ফেলে দেওয়ার একটি সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এ ঘটনার বিচার দাবি করে স্থানীয় সাংবাদিকরা প্রেসক্লাবে মানববন্ধন করেন। উপরোক্ত ঘটনাটি প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারিত হলে চন্দনাইশসহ সারাদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।

এ ঘটনায় ভিকটিমের পিতা বাদী হয়ে চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ থানায় ২জন নামীয় এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৬-৭ জনকে আসামী করে, একটি মামলা দায়ের করেন যার মামলা নং ২/৬০ তারিখ ০৫ এপ্রিল ২০২৩ই ধারা ১৪৩/৪৪৮/৩২৩/৩২৫/৩২৬/ ৩০৭/৩৭৯/৪২৭/৫০৬ পেনাল কোড ১৮৬০।

র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম উক্ত হামলার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করতঃ বর্ণিত হামলার ঘটনার সাথে জড়িত পলাতক আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে ছায়াতদন্ত ও গোয়েন্দা নজরদারী শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় তাদেরকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হন ‘চট্টগ্রাম র‌্যাব-৭’ গ্রেফতারকৃত আসামী সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।