ই-পেপার | শুক্রবার , ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
×

বড় জাহাজ ভিড়বে চট্টগ্রাম বন্দরে

প্রায় ১৩৫ বছর পর বড় জাহাজ ভেড়ানোর সক্ষমতা হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরের।

এক বছর ধরে কর্ণফুলী নদী ও বন্দর চ্যানেলে বিদেশি প্রতিষ্ঠান দিয়ে চালানো জরিপে ইতিবাচক সাড়া পেয়ে এ পথে হাঁটছে বন্দর কর্তৃপক্ষ । জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে বন্দরের জেটিতে ট্রায়াল রান চালিয়ে শেষের দিকে এটি ‘পাকাপোক্ত’ করার কথা জানিয়েছেন বন্দরের কর্মকর্তারা।

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, লন্ডনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘এইচআর ওয়েলিং ফোর্ড’ গত এক বছর ধরে তিনটি বিষয়ে জরিপ চালিয়েছে। এরমধ্যে বর্তমানে চ্যানেলের যে অবস্থা এবং জেটি যেভাবে রয়েছে তাতে বন্দরে ঠিক কত গভীরতাসম্পন্ন এবং দৈর্ঘ্যের জাহাজ ভেড়ানো যায়, বন্দরের দুই তীরের কী পরিমাণ জায়গা জেটি বা ইয়ার্ড সম্প্রসারণ কাজে ব্যবহার করা যায় এবং কোন ধরনের পদক্ষেপ নিলে বন্দরে সর্বোচ্চ কত গভীরতাসম্পন্ন এবং দৈর্ঘ্যের জাহাজ ভেড়ানো যাবে— এ বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিয়ে জরিপটি চলে। গত এপ্রিল মাসে পাঠানো ওই জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে বন্দরের যে অবকাঠামো রয়েছে তা ব্যবহার করে ১০ মিটার ড্রাফট ও ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ ভেড়ানা যাবে। তবে বর্হিনোঙর ও গুপ্তাখালের সন্নিকটের বাঁকে কিছুটা কাজ করে নদীর দুই একটি পয়েন্টে ড্রেজিং করলে বন্দর চ্যানেলে ২২৫ মিটার দৈর্ঘ্যের ও ১১ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হবে। এই জরিপ প্রতিবেদন অনুসারেই কাজ করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। জানুয়ারির মাঝামাঝিতে কয়েকটি বড় জাহাজ ভেড়ানোর মধ্য দিয়ে ট্রায়াল রান চালানো হবে। সেখানে সফল হলেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে যাবে বন্দর কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে বন্দরের ২ থেকে ৮ নম্বর জেটিতে সাড়ে আট মিটার গভীরতার জাহাজ ভেড়ানো যায়। সেখানে গভীরতা কিছুটা বাড়ানো গেলেও ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। তবে বন্দরের ৯ থেকে ১৩ নম্বর জেটিতে ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানো হবে বলে জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, বন্দর জেটিতে ২০০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ মিটার ড্রাফটের বড় জাহাজ ভেড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নতুন বছরে জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে বন্দর জেটিতে বড় জাহাজ ভেড়ানোর জন্য ট্রায়াল রান দেয়া হবে। জানুয়ারির শেষেই আমরা নতুন জাহাজ ভেড়ানোর ঘোষণা দেবো।তবে ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ বার্থিংয়ের সুযোগ পেলে ২ হাজার ৬শ’ থেকে ২ হাজার ৮শ টিইইউএস কনটেইনার বহন করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। কেননা জাহাজে যত বেশি কনটেইনার রাখার সুযোগ তৈরি হবে পণ্য আমদানি খরচ ততোই কমবে। তাই সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে নতুন বছরেই এ সুবিধাটি পেতে যাচ্ছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা।
বিজিএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর এখন অনেকটাই এগিয়ে গেছে। বন্দর জেটিতে বড় জাহাজ ভিড়লে বেশি পরিমাণে কনটেইনার বহন করানো সম্ভব হবে।

এতে করে আমাদের আমদানি খরচ অন্তত ১৫ থেকে ২০ ভাগ কমে যাবে। ১৯৭১ সালের আগে চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে ১৩৭ মিটার লম্বা ও ৭ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানোর অনুমতি দিতো বন্দর। ১৯৯৫ সালে আরেক দফায় জাহাজের দৈর্ঘ্য ও ড্রাফট বাড়ানো হয়। এরপর সর্বশেষে ২০১৪ সালের ২ মার্চ বন্দরের পর্ষদ সভায় ১৯০ মিটার লম্বা ও সাড়ে ৯ মিটার ড্রাফটের জাহাজ বন্দর জেটিতে ভেড়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এসব জাহাজ মাত্র ২ হাজার ২শ টিইইউএস কনটেইনার বহন করতে পারতো। সবশেষ ২০২৩ সালে নতুন বছরের শুরুতেই ২০০ মিটার লম্বা ও ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানোর অনুমতি দিলে বন্দর আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবে।

এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত রিপোর্ট