ই-পেপার | শুক্রবার , ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
×

চিটাগাং চেম্বারে প্রাক-বাজেট মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের প্রাক্কালে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনিম দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি’র সদস্য ও অত্র অঞ্চলের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সাথে ১৫ মার্চ সকালে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারস্থ বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে এক প্রাক-বাজেট মতবিনিময় সভায় মিলিত হন। সভায় চেম্বার প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম’র সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন

রাজস্ব বোর্ডের সদস্যবৃন্দ মোঃ মাসুদ সাদিক, ড. সামস উদ্দিন আহমেদ ও জাকিয়া সুলতানা, চেম্বার সহ-সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর, পরিচালকবৃন্দ এ. কে. এম. আক্তার হোসেন, অঞ্জন শেখর দাশ ও মোঃ রকিবুর রহমান (টুটুল), চেম্বারের প্রাক্তন সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আলী আহমেদ, বিজিএমইএ’র ১ম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের পরিচালক আবুল বশর চৌধুরী, চেম্বারের প্রাক্তন পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, উইম্যান চেম্বারের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবিদা মোস্তফা, কক্সবাজার চেম্বারের সভাপতি মোঃ আবু মোরশেদ চৌধুরী, রাঙ্গামাটি চেম্বারের সভাপতি মোঃ আব্দুল ওয়াদুদ, আবাসন খাতে রিহ্যাব-চট্টগ্রামের চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশন সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু, শিপ বিল্ডিং এর পক্ষে ইঞ্জিনিয়ার গোলাম সরওয়ার, শিপ রিসাইক্লিং’র পক্ষে নওশির হাসান,

চিটাগাং ট্যাক্সেস বার এসোসিয়েশন’র পক্ষে মোঃ নুর হোসেন, বিজিএপিএমইএ’র পক্ষে পরিচালক তৌফিকুল আলম, লুব-রেফ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ ইউসুফ, বিএসআরএম’র পক্ষে শেখর রঞ্জন কর, বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন’র পক্ষে আশরাফ হোসেন মাসুদ, মটর পার্টস এন্ড টায়ার টিউব মার্চেন্ট এসোসিয়েশন’র পক্ষে লিয়াকত আলী চৌধুরী, রাবার-গার্ডেন ওনার্স এসোসিয়েশন’র পক্ষে মোঃ কামাল উদ্দিন, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি সালামত আলী, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি সালেহ আহমেদ সুলেমান, রিলায়েন্স এসেট্স্ এন্ড ডেভেলাপমেন্টস (বিডি) লিঃ’র পরিচালক ওমর মুক্তাদির ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবসায়ী গ্রুপের এম ইলিয়াছ খান আইয়ুব।

সভায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও অন্যান্য সরকারি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, চট্টগ্রামের কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর বিভাগের কমিশনারবৃন্দ, চেম্বার পরিচালকবৃন্দ জহিরুল ইসলাম চৌধুরী (আলমগীর), মোঃ ইফতেখার ফয়সাল, মোহাম্মদ আদনানুল ইসলাম, মোহাম্মদ নাসিরুল আলম (ফাহিম), খাগড়াছড়ি চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি’র সভাপতি কনজরী চৌধুরী, চেম্বারের প্রাক্তন পরিচালকবৃন্দসহ বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী নেতৃবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শিল্পায়নের মাধ্যমে সক্ষমতা তৈরি করতে হবে ঃ এনবিআর চেয়ারম্যান

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনিম বলেন-আমাদের সামনে রয়েছে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন’র চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের সক্ষমতার জায়গা তৈরি করতে হবে। এজন্য যুগোপযোগী শিল্পায়ন যেমন করতে হবে তেমনি করের আওতাও বাড়াতে হবে। আমাদের কাছে যেসব প্রস্তাবনা এসেছে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সবকিছু বাস্তবায়ন করতে পারবো না।

কিন্তু ভবিষ্যতে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে আগামীতে বিষয়গুলো বিবেচনা করা হবে। তিনি আরো বলেন-সীমিত সংখ্যক জনবল দিয়ে দেশের ক্রমবর্ধমান জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা এবং সরকারের রাজস্ব আয় বাড়াতে এনবিআর কর, শুল্ক এবং ভ্যাটের আওতা বাড়ানোর কাজ করছে। পাশাপাশি এনবিআরের উইংসগুলোকে শক্তিশালী করার জন্য চট্টগ্রামে দৃষ্টিনন্দন কাস্টমস হাউস ভবন, কর ভবন, ট্যাক্স একাডেমী আধুনিকায়নের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এছাড়া ভবিষ্যতে ভ্যাট ভবনের জন্যও প্রকল্প নেয়া হবে।

স্বনির্ভর রাজস্ব ব্যবস্থা গড়ে তুলতে স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করুণ ঃ চেম্বার সভাপতি

সভায় স্বাগতঃ বক্তব্যে চিটাগাং চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন-স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য সুদূরপ্রসারী লক্ষ্যকে সামনে রেখে জাতীয় বাজেট সাজানো বিশেষ করে আমরা বর্তমানে যে সকল চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছি তা হ্রাস করা এবং দীর্ঘমেয়াদী টেকসই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের উপর গুরুত্বারোপ করেন। এছাড়া ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়নে দেশের স্বনির্ভর রাজস্ব ব্যবস্থা গড়ে তুলতে স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেয়ার আহবান জানান তিনি। চেম্বার সভাপতি আরো বলেন-সরকারের রাজস্ব যেমন বাড়াতে হবে তেমনি যারা রাজস্ব যোগান দেয় তাদের সুযোগ সুবিধা মাথায় রেখে ভ্যাট, শুল্ক ও ট্যাক্স বিষয়ক নীতিমালা প্রণয়ন করার উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি ব্যক্তি পর্যায়ে করসীমা ৩ লক্ষ টাকা থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত, পরবর্তী ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ৫%, ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ১০%, ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ১৫%, ৭ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ২০% এবং তদুর্ধ্ব ২৫% হারে নির্ধারণ, ইন্টিগ্রেটেড ট্যাক্স এডমিনিস্ট্রেশন সিস্টেম প্রবর্তন, অগ্রিম কর বা অগ্রিম ভ্যাট সমন্বয় করে দ্রুত রিফান্ড করা, এইচ.এস. কোড সমস্যা নিরসনের মাধ্যমে বিভিন্ন রকম শুল্ক জরিমানা এবং সময়ক্ষেপনের জটিলতা দূর করার প্রস্তাব করেন।

পণ্যের বিবরণ সঠিক থাকলেও এইচএসকোড এ অনিচ্ছাকৃত ভুলের কারণে প্রায় ২০০-৪০০% জরিমানা করা হয়। পণ্যের বিবরণ যদি সঠিক প্রমানিত হয় তাহলে এইচএস কোডের অনিচ্ছাকৃত ভুলে জরিমানা না করা, রপ্তানি খাতকে আরো সম্প্রসারণ ও বহুমূখীকরণের লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ, রপ্তানি বহুমূখীকরণে গবেষণা খাতের বিনিয়োগকে করমুক্ত করার সুপারিশ করেন চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম।

চেম্বার সহ-সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর বলেন-দেশের রাজস্ব বাড়াতে দীর্ঘমেয়াদী পলিসি নেয়া উচিত। এক্ষেত্রে আমার প্রস্তাবনা হলো দেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানী সংকট নিরসনে শিল্প প্রতিষ্ঠানে যে সোলার প্যানেল প্রয়োজন তার আমদানি পর্যায়ে ২৫-৩১% শুল্ক বিদ্যমান রয়েছে। তাই শিল্প কারখানায় গ্রীণ এনার্জির ব্যবহার বাড়াতে এবং জ্বালানীর চাপ কমাতে আগামী কয়েক বছর সোলার প্যানেল ও যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক মুক্ত রাখার আহবান জানান। এছাড়া পণ্য মূল্য নির্ধারণের জটিলতা নিরসনে বাণিজ্যিক আমদানিকৃত পণ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক মূল্যের শতাংশ হিসেবে নির্ণয় না করে বরং প্রত্যেক এইচএস কোড অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট টাকার পরিমাণ শুল্ক নির্ধারণ করার প্রস্তাব দেন।

এনবিআর সদস্য মোঃ মাসুদ সাদিক বলেন-ব্যবসা-বাণিজ্য যেন সহজ হয় এবং বাধাগ্রস্ত না হয় সেইজন্য এইচএস কোড জটিলতা নিরসন করা হবে। এছাড়া কাস্টমস বিষয়ক যেসব প্রস্তাবনা এসেছে তা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবে এনবিআর। আমরা বদলে যাব, বদলে দিব এই শ্লোগানে দেশের রাজস্ব আয় বাড়াতে করের ক্ষেত্র বাড়ানোর গুরুত্বারোপ করে এনবিআর সদস্য ড. সামস উদ্দিন আহমেদ বলেন-আয়কর দেয়ার সংস্কৃতি বাড়াতে হবে। এজন্য দেশের করনেট সম্প্রসারণের জন্য আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তিনি করমুক্ত আয়সীমা ৩ লক্ষ থেকে ৫ লক্ষ টাকা করার প্রক্রিয়া বিবেচনাধীন আছে বলে জানান। এনবিআর সদস্য জাকিয়া সুলতানা বলেন-স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে ঋণের নির্ভরতা কমাতে হবে। এই জন্য ট্যাক্সের নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে।

অন্যান্য বক্তারা এইচএস কোড জটিলতা নিরসন, বিকল্প সার্ভারের ব্যবস্থা করা, নারী উদ্যোক্তাদের আয়কর সীমা ও এসএমই খাতে জামানতহীন ব্যাংক ঋণের পরিমাণ ২৫ লক্ষ টাকা থেকে ৫০ লক্ষ টাকা করা, সকল কাস্টমস স্টেশনে একই পণ্যের সমমূল্যে শুল্কায়ন নিশ্চিত করা, রাজস্ব আইন পরিবর্তনের কমিশন গঠন, রড, সিমেন্ট ইত্যাদি নির্মাণ সামগ্রীর দাম স্থিতিশীল রাখা, আগাম করের ক্ষেত্রে দ্রুত রিফান্ড, ভ্যাট সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি সময়সীমা নির্ধারণ, রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসকের অনুমোদন ব্যতিরেকে শুধু মূসক ৬.৩ এর মাধ্যমে আসবাবপত্র বিপণনের সুযোগ প্রদান, লবণ শিল্পের উন্নয়নে হাইটেক প্রযুক্তি আনায়নে শুল্ক মুক্ত রাখা, বিষমুক্ত অর্গানিক শুটকি উৎপাদনে কর অবকাশ সুবিধা, ভ্যাটের হার কমিয়ে সর্বস্তরে চালু করা, চট্টগ্রাম কাস্টমস এর জনবল বৃদ্ধি ইত্যাদি দাবী উত্থাপন করেন।

এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত রিপোর্ট