ই-পেপার | রবিবার , ২৮ এপ্রিল, ২০২৪
×

অগ্নিকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি রোধে ব্যবস্থার দাবিতে ৪৮ নাগরিকের বিবৃতি

ঢাকা অফিস :

দেশে একের পর এক অগ্নিকাণ্ড হচ্ছে। কিন্তু অগ্নিদুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, বিচার বা প্রতিকার ভুক্তভোগীরা এখনও পারনি।এ ধরনের অব্যবস্থা, বিচারহীনতা, প্রতিকারবিহীন অবস্থা অব্যাহতভাবে চলতে পারে না।  

সম্প্রতি বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যুদের প্রতি শোক জানিয়ে ও এর পুনরাবৃত্তি রোধে ব্যবস্থা দাবি করে রোববার (৩ মার্চ) ৪৮ বিশিষ্ট নাগরিক এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছেন।

বিবৃতিতে নাগরিকরা বলেছেন, অগ্নিকাণ্ডে ২০১০ সালে নিমতলীতে ১২৪ জন, ২০১৯ সালে চকবাজারে ৭১ জনসহ আরও প্রাণ হারিয়েছে। এর আগে যে ঘটনা ঘটেছে, তা থেকে বেইলি রোডের অগ্নিদুর্ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন করে ভাবার উপায় নেই। আগের অগ্নিদুর্ঘটনাই ধারাবাহিকতা।

তারা বলেন, আগের অগ্নিদুর্ঘটনা থেকে জানা যায়, এসবের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের এবং রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্তব্যে চরম অবহেলাই মূলত দায়ী।

বেইলি রোডে অগ্নিদুর্ঘটনায় শিকার ভবনটিকে রাজউক শুধু বাণিজ্যিক ব্যবহারের শর্তে অনুমোদন দিয়েছিল। ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ ভবনটিকে অগ্নিকাণ্ডের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে তিনবার নোটিশ দিয়েছে। নোটিশ পাঠানোর পর কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। নাগরিকদের প্রশ্ন, শুধু নোটিশ দিয়েই কি ফায়ার সার্ভিসের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়? তাদের আইনি ব্যবস্থা নেওয়ারও ক্ষমতা রয়েছে, তা তারা কেন করলেন না?

 বিবৃতিদাতারা আরও বলেন, দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কর্তৃপক্ষ কী ব্যবস্থা নিয়েছিল, তা জনগণকে জানানো, জবাবদিহি করা এখন সময়ের দাবি। বেইলি রোডের ঘটনাসহ সব দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।  

তাদের দাবি, ভবন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা খতিয়ে দেখা এবং উচ্চ আদালতের নির্দেশনার বাস্তবায়ন তদারকি, দায়ীদের শাস্তি প্রদান, অগ্নিদুর্ঘটনা প্রতিরোধ নীতিমালা প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়ন, ভুক্তভোগীদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া।

বিবৃতিদাতারা হলেন, মানবাধিকারকর্মী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, নিজেরা করির সমন্বয়ক খুশী কবির, মানবাধিকারকর্মী হামিদা হোসেন, সাবেক মন্ত্রিপরিষদের সচিব আলী ইমাম মজুমদার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত, বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, সেন্ট্রাল উইমেন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য পারভীন হাসান, বিএনডব্লিউএলএর নির্বাহী পরিচালক সালমা আলী, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক ফারুখ ফয়সাল, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, মানবাধিকারকর্মী মো. নুর খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, নারীপক্ষের সদস্য শিরিন হক, ব্লাস্টের অনারারি নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফিরদৌস আজিম, সাংস্কৃতিক কর্মী অরূপ রাহী প্রমুখ।

বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাত পৌনে ১০টার দিকে রাজধানীর বেইলি রোডে অবস্থিত গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে  আগুন লাগে। এতে ৪৬ জন নিহত হন এবং ১২ জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন, যারা শঙ্কামুক্ত নন বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ওই ভবন থেকে ৭০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।