ই-পেপার | মঙ্গলবার , ৩০ এপ্রিল, ২০২৪
×

সাম্প্রদায়িক রাজনীতির পৃষ্ঠপোষকদের শিকড় উপড়ে ফেলতে হবে-নওফেল

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ ও ধর্মীয় গোঁড়ামি প্রতিরোধে আমাদের সবার দায়িত্ব রয়েছে। পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় নেতাদের পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতাদের দায়িত্ব এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি। সাম্প্রদায়িক হামলা উস্কে দিতে গুজব সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে। অনেক সময় ধর্মীয় উৎসবে অহেতুক উত্তেজনা সৃষ্টি করা হয়, যার সঙ্গে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের কোনো সম্পর্ক থাকে না। উৎসবে উচ্ছ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্বশীল আচরণের ব্যাপারেও আমাদের সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। নওফেল বলেন, ‘দেশের উন্নয়নের গতি অব্যাহত রাখতে গিয়ে আমরা যে রাজনৈতিক যুদ্ধে রয়েছি, এই যুদ্ধ অত্যন্ত কঠিন।

এই যুদ্ধে জয়ী হতে হলে সমাজে যারা সাম্প্রদায়িক রাজনীতির পৃষ্ঠপোষক, তাদের শিকড় যতই গভীরে থাকুক না কেন, সেটির মূল উপড়ে ফেলতে হবে। মন্দিরের জায়গা দখল করবেন সাধু সন্ন্যাসীদের নামে মামলা হামলা করবেন এটা আমরা কোনো ভাবেই বরদাস্ত করবো না। সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মীয় উগ্রবাদ, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের অপব্যবহার ধর্মনিরপেক্ষতার ক্ষেত্রে বারবার বাধা সৃষ্টি করছে। জামায়াত-বিএনপির মতো উগ্র সাম্প্রদায়িক দলগুলোর অবস্থান অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে এখনো বড় বাধা।

আজ নন্দনকানন শ্রীশ্রী রাধামাধব মন্দির ও গৌর নিতাই আশ্রম সম্মুখে ডিসি হিল প্রাঙ্গণে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) চট্টগ্রাম আয়োজিত বিশাল ২৬তম কেন্দ্রিয় রথযাত্রার ধর্মীয় মহাসম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।নন্দনকানন ইসকন মন্দিরের অধ্যক্ষ পন্ডিত গদাধর দাস ব্রহ্মচারীর সভাপতিত্বে ও তারণ নিত্যানন্দ দাস ব্রহ্মচারীর সঞ্চালনায় উদ্বোধক ছিলেন সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ.জ.ম নাছির উদ্দীন। প্রধান বক্তা ছিলেন চট্টগ্রাম
মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়। উদ্বোধক সাবেক মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীন বলেন, জনগন যার যার ধর্ম পালন করবে।

অন্যের ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত দেওয়ার অধিকার কারও নেই। এই দেশের সাম্প্রদায়িক শক্তিকে যারা পৃষ্টপোষকতা করবে তাদেরকে শক্ত হাতে মোকাবেলা করা হবে। এই দেশ জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। এই দেশে সাম্প্রদায়িকতাকে প্রশয় দেওয়া হবে না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেত্বতে এই দেশ পরিচালিত হবে। আজ সেই আর্দশ হচ্ছে ধর্মে ধর্মে কোন হানাহানি থাকবে না। দেশের সকল নাগরিক সমান অধিকার পাবে। যারা সাম্প্রদায়িক উসকানি দিচ্ছে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রথযাত্রায় মহান আশির্বাদক ছিলেন ইসকনের হেডকোয়ার্টার ভারতের মায়াপুর হতে আগত ইস্কনের অন্যতম সন্যাসী শ্রীমৎ ভক্তি বিজয় ভাগবত স্বামী মহারাজ, বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জন্মাষ্টমী উদ্যাপন পরিষদের কেন্দ্রিয় সাধারন সম্পাদক প্রকৌশলী প্রবীর সেন, চট্টগ্রাম মহানগর হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নিতাই প্রসাদ ঘোষ, জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রিয় সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট চন্দন তালুকদার, মহানগর পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি লায়ন আশিষ ভট্টাচার্য, কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিক, সাবেক কাউন্সিলর বিজয় কিষান চৌধুরী, কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন, জন্মাষ্টমী পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী আশুতোষ দাশ, চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সহ সভাপতি দেবাশীষ পাল দেবু, মহিলা কাউন্সিলর নিলু নাগ, মহিলা কাউন্সিলর রুমকী সেনগুপ্ত, মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন উজ্জ্বল, মিথুন মল্লিক, নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক দেবাশীষ আচার্য্য, শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ইসকন মোহরা মন্দির অধ্যক্ষ সর্বমঙ্গল গৌর দাস ব্রহ্মচারী, নন্দনকানন ইসকন মন্দিরের সহ সভাপতি অকিঞ্চন গৌর দাস ব্রহ্মচারী, যুগ্ম সম্পাদক মুকুন্দ ভক্তি দাস ব্রহ্মচারী, সুবল সখা দাস ব্রহ্মচারী, অপূর্ব মনোহর দাস ব্রহ্মচারী প্রমুখ।

ঐতিহ্যবাহী মহাশোভাযাত্রা নন্দনকাননস্থ শ্রী শ্রী রাধামাধব মন্দির সম্মুখে ডিসি হিল প্রাঙ্গন থেকে শুরু হয়ে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে নন্দনকানন গৌর নিতাই আশ্রমে এসে শেষ হয়। মহাশোভাযাত্রায় চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা থেকে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে লক্ষাধিক ভক্তবৃন্দসহ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীবৃন্দ ব্যানার, প্লেকার্ড, ফেস্টুন, পৌরাণিক সাজ ও বাদ্যযন্ত্র নিয়ে যোগদান করেন। আগামী ২১ জুন থেকে ৭ দিনব্যাপী জে. এম সেন হলে ভাগবদ সপ্তাহ অনুষ্টিত হবে। ভাগবতম কথা পরিবেশন করবে শ্রীমৎ ভক্তি বিজয় ভাগবত স্বামী মহারাজ। উল্লেখ্য যে ২৮ জুন উল্টো রথযাত্রা নন্দনকানন গৌর নিতাই আশ্রম হতে শুরু করে উল্টো পথে নন্দনকানন শ্রীশ্রী রাধামাধব মন্দিরে এসে শেষ হবে।