ই-পেপার | শুক্রবার , ১৭ মে, ২০২৪
×

বাংলা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবীতে বৈঠক অনুষ্ঠিত

বাংলা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে বৈঠক করেছেন জ্ঞানভিত্তিক সামাজিক আন্দোলনের সভাপতি প্রফেসর এম এ বার্নিক। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অবস্থিত বিটাক সভা কক্ষে জ্ঞানভিত্তিক সামাজিক আন্দোলনের সাংগঠনিক সভায় এ দাবি তোলেন বক্তারা। সভায় দেশের খ্যাতনামা ব্যক্তিগণ উপস্থিত ছিলেন। এতে সভাপত্বিতে করেন সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক এম এ বার্নিক, সার্বিক পরিচালনায় সঞ্চালনায় ছিলেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরী। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক বিচারপতি ফয়েজি।
সভায় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বলেন, প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম দেশের শতভাগ মানুষ শিক্ষিত করে গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে বাংলা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে বাংলা কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তারই প্রেক্ষিত বাংলা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানাই।আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে উপস্থিত সকলকে জ্ঞানভিত্তিক সামাজিক আন্দোলনের সদস্য করার প্রস্তাব করেন তিনি।
পরে সভাপতি তার বক্তব্যে বলেন, শুধু বাংলা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাই নয়, আমাদের দাবি আরও বেশি। এদের মধ্যে বাংলাকে ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি এবং জাতীয় ভাষানীতির বাস্তবায়নের দাবি উল্লেখযোগ্য। তিনি বলেন, জ্ঞানভিত্তিক সামাজিক আন্দোলন, বাংলাদেশে একটি বাংলা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বসম্মত আওয়াজ তুলে যাচ্ছে, সংগঠনটি দীর্ঘদিন ধরে এ ইস্যুতে সোচ্চার।
এ সময় প্রধান অতিথি বক্তব্যে সাবেক বিচারপতি ফয়েজি বলেন, আমাদের বর্তমান সমাজে বাংলা ভাষার যে বিবর্তন, তা কষ্ট দেয়। বাংলার নামে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুক কিংবা অন্যান মাধ্যমে ব্লগাররা এমনভাবে বলতে শুরু করেছে তা অত্যন্ত শ্রুতি কটু। তিনি আরও বলেন, ভাষাভিত্তিক আমাদের এই জাতি রাষ্ট্র বাঙালিরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র চেয়েছিল। পৃথিবীতে এটি একটি অসাধারণ ব্যাপার। তাই যদি হয় আমাদের জাতিসত্তার পরিচয় আমাদের বাংলা ভাষা। আর বাংলা শব্দগুলোর মধ্যে যদি অপ শব্দ প্রবেশ করে তাহলে আমাদের জাতিসত্ত্বার প্রতি আঘাত লাগছে। তাহলে আমরা আস্তে আস্তে আমাদের জাতীয় পরিচয় হারাতে বসেছি। আজ বাংলা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবী একটি মহান ও মহৎ উদ্যোগ।
সভাপতিদের বক্তব্যে অধ্যাপক এম এ বার্নিক বলেন, ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৫২ সাল তারপর ৫৫ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন পরিব্যপ্ত ছিল। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সংগঠন তমুদ্দিন মজলিস, এই সংগঠনটির নেতৃত্ব দিয়েছেন অধ্যাপক আবুল কাশেম, যাকে আমরা ভাষা আন্দোলনের জনক বা স্থপতি বলে থাকি। তিনি রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের পরে লীগ অব নেশান বা গঠনমূলক কাজ হিসেবে তিনটি বিষয় কাজ হাতে নেন তার মধ্যে একটি বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা ২. বাংলা ভাষার ভিতরে সংস্কার করে একটি পরিমিত ভাষ হিসাবে তৈরী করা, যেটাকে ডক্টর মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ সোজা বাংলা হিসেবে অবহিত করেছেন আর এই সোজা বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন অধ্যাপক আবুল কাশেম আর সেটার রূপ দাতা ছিলেন ডক্টর মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। ১৯৪৭ -৪৮ সনের পর গঠনমূলক কাজের অংশ হিসেবে বাংলা একাডেমির রূপ রেখাটি অধ্যক্ষ আবুল কাশেমই সরকারের কাছে পেশ করে ছিলেন, সেটা অনুযায়ী পরবর্তীতে বাংলা একাডেমি গঠিত হয়। আরেকটি কাজ ছিল বাংলা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা। ততকালীন যারা জ্ঞানী যেমন ডক্টর মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁ, ডক্টর কুদরতে খুদা প্রফেসার ইউনুস আলী, এরকম যারা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন অধ্যাপক আবুল কাশেম এর সাথে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন কিন্তু ঐ সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা কঠিন কাজ ছিল, আইয়ুবের আমলে তা সম্ভব ছিল না এই পরিপেক্ষিতে তিনি একটি কলেজ হিসাবে কাজ শুরু করে ছিলেন, ১৯৬১ সালে বাংলা কলেজ প্রতিষ্ঠার সাথে সাথে ইন্টারমিডিয়েট থেকে উচ্চ শ্রেণীতে পাঠ্যপুস্তক ছিল না বাংলায়, পরিভাষা সমস্যা ছিল সরকারি স্বীকৃতি ব্যাপার ছিল, প্রশ্ন পত্রের বোর্ড আর বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রহণ করার ব্যাপার ছিল, অধ্যাপক আবুল কাশেম কে তমূদ্দন মজলিশের মধ্যে নেতৃবৃন্দ ও সমকালীন বুদ্ধিজীবীরা ছিলেন তাদেরকে অনেক কাজ করতে হয়েছিল ডক্টর মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বৃদ্ধ বয়সে বাংলা কলেজের সভাপতি হিসাবে কাজ করেছেন পাশাপাশি অনেক গবেষণা করেছেন,মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বাংলা কলেজের জন্য কাজ করে গেছেন , প্রিন্সপাল ইব্রাহিম খাঁ কলেজের ট্রেজারার হিসাবে কাজ করেছেন এই রকম একটি পরিস্থিতিতে অধ্যাপক আবুল কাসেমের বাংলা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি কিন্তু পাঠ্য পুস্তক, পরিভাষা, সরকারি স্বীকৃতি এই কাজগুলো সব উনি আনজাম দিয়ে ইন্টারমিডিয়েট থেকে উচ্চ শ্রেণীতে উন্নিত করেছেন।
তিনি এটা কেন করলেন? একটাই লক্ষ উদ্দেশ্য ছিল এ দেশের মানুষকে,শতকরা ১০০ % লোককে শিক্ষিত করে গড়ে তোলা। ১৯৮০ সালের দিকে তিনি অসুস্থ্য হয়ে পরেন বাংলা ভাষার প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা থেকেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ১৯৫২ সালে বাংলা ভাষার জন্য ভাষা আন্দোলনে মানুষ প্রাণ দিয়ে ছিলেন। পৃথিবীর ইতিহাসে ভাষার জন্য মানুষ প্রাণ দিয়েছে এমন একটিও উদাহরণ নেই, আমরা সেই জাতি। তিনি বলেন, বাংলা ভাষার প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায় উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত হয়ে যেমন বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে কিন্তু এই ভাষাকে আমাদের জন জীবনে টিকিয়ে রাখার জন্য আমরা কোন কাজ করি নাই ? তিনি আরও বলেন, আমরা এখনো বাংলা কলেজকে বাংলা বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করতে পারিনি। বাংলা কলেজ কে বাংলা ভাষার বিশ্ববিদ্যালয় আর বাংলা কলেজ ভাষার গবেষণা, বাংলার ইতিহাস, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য সম্বলিত রক্ষার উদ্দেশ্য বাংলা কলেজ প্রতিষ্ঠত হয়েছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় তা আমরা করতে পারি নাই।
তিনি বলেন, পাকিস্তানিরা উর্দুভাষী আমাদের কাছে পরাজিত হয়ে তারা কিন্তু আমাদের কাছে থেকে শিখেছে ভাষায় কে মর্যাদা ও কিভাবে পরিচর্চা করতে হয় । আজ তারা তিনটি উর্দু বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছে। পশ্চিমবঙ্গ বাংলা ভাষার জন্য কোনো আন্দোলন করেনি কিন্তু তারা ২০২০ সালে একটি বাংলা বিশ্ববিদ্যালয়ও প্রতিষ্ঠা করেছে। তাই, বাংলা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের স্বপ্ন, এবং আমরা এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে কাজ করে যাচ্ছি।
জ্ঞানভিত্তিক সামাজিক আন্দোলন ইতিমধ্যেই প্রস্তাবিত জাতীয় ভাষা নীতির খসড়া? গত বছরের ২রা ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা দেয় প্রতিনিধিদলের সদস্যরা এখনও আশাবাদী যে তাদের জাতীয় ভাষা নীতির প্রস্তাব সরকার যথাযথ বিবেচনা করবে। ভাষা নীতির দাবির পাশাপাশি, তারা দেশে একটি বাংলা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয়তার জন্য সোচ্চার হবেন।
আমরা মনে করি যা সর্বসম্মতভাবে সমর্থন করে। তাই আমরা আর বিলম্ব না করে দেশে একটি বাংলা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের যৌক্তিক দাবিকে সমর্থন ও সমর্থন করে প্রতিষ্ঠার দাবী জানাই। বিশ্বের প্রধান প্রধান ভাষাভাষী জাতিগুলো নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি বিকাশে জন্য নিজেস্ব ভাষার এক বা একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলতে দেখা যায়। ফ্রেঞ্চ ভাষার জন্য এক কালজয়ী বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। অথচ বাংলাদেশে বাংলা ভাষার জন্য এমন কিছুই নেই। কারণ সকল ভাষাভাষী লোকেরা সচেতনভাবে তাদের ভাষা ও সংস্কৃতিক বিকাশে যতটা সচেতন, ভাষার জন্য রক্তদানকারী বাংলাদেশের বাঙ্গালিরা ততটা সচেতন হয়নি। বাংলা রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর এদেশের বাঙ্গালিরা ধরে নিয়েছে যে, তাদের কাজ শেষ। কিন্তু রাষ্ট্রভাষার আলোকে ‘জাতীয় ভাষানীতি’ তৈরি, ভাষা ও সাহিত্যের উৎকর্ষ সাধনে গবেষণা, প্রকাশনা, অনুবাদ ইত্যাদি কাজগুলো যথেষ্ট গতি পায়নি। ফলে বিদেশি ভাষার প্রাদুর্ভাব যেমন আছে, তেমনি সর্বস্তরে এখনো বাংলাভাষা প্রতিষ্ঠা কারা সম্ভব হয়নি। অপরদিকে ভাষা-আন্দোলন না করেও, ভারতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ‘বিশ্ব বাংলা বিশ্ববিদ্যালয়’।।
আমাদের দেশে বাংলা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিষয়টির সাথে বাংলাভাষায় জ্ঞান ও মনীষার জগতে বিপ্লব সাধনের আসল উদ্দেশ্য নিহিত আছে। বাংলা ভাষার মাধ্যমে বিশ্বের তাবৎ জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির শিক্ষাদানের একটি অনুশীলনকেন্দ্র হবে বাংলা বিশ্ববিদ্যালয়। তিনি আরও বলেন প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম তিনি ভাষা ভিত্তিক যে বাংলা বিদ্যাললয়ের স্বপ্ন দেখেছিলেন তখন কার পৃথিবীতে কোন দেশেই ভাষা ভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না এই টি প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম সাহেবের দূরদর্শিতা প্রমান।
বিশেষ অতিথি তমুদ্দিন মজলিশ সভাপতি ড. মোঃ সিদ্দিক হোসাইন বলেন, বাংলা কলেজ যদি অধ্যাপক আবুল কাসেম সাহেবের কাছে বা আমাদের হাতে (তমুদ্দিন মজলিশের) থাকতো তাহলে আনেক আগেই এটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হতো বলে আমাদের ধারণা। ভুল সকলেরই ছিল, আছে আমাদের ভুল থাকতেই পরে। আগামীতে তমুদ্দিন মজলিশ বাংলা বিশ্ববিদ্যালয় দাবীর প্রতি সকল সমর্থন থাকবে।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক নজরুল ইসলাম তমিজী (চেয়ারম্যান বাংলাদেশ মানবাধিকার সোসাইটি)। প্রকৌশলী মোঃ মোহসীন,পরিচালক (বিটাক) কবি অশোক ধর ( দৈনিক স্বদেশ বিচিত্রা) আলহাজ্ব ড. শরিফ সাকি, কবি সৈয়দ নাজমুল আহসান (আজীবন সদস্য বাংলা একাডেমি), সাজেদা হক (দৈনিক আমাদের বাংলা), আলতাফ হোসেন (দৈনিক আমাদের বাংলা), বেঞ্জামিন রফিক (দৈনিক আমাদের বাংলা), আল মাহাদী মোহাম্মদ উল্লাহ সম্পাদক (সাপ্তাহিক আলো), কবি জান্নাতুল নাঈম, ডাঃ আল হাসান মোবারক, সংগঠনিক সম্পাদক রূপনগর প্রেসক্লাব ঢাকা। মোঃ কামাল হোসেন (হকার্স নেতা)সহ আরও অনেকে। উপস্থিত সকলেই উদ্যোগের জন্য সাধুবাদ জানান এবং একাত্মতা ঘোষণা করেন।