ই-পেপার | শুক্রবার , ৩ মে, ২০২৪
×

মিষ্টিমুখের দধিতে জীবন নাশক ক্যামিকেল!

  • বাসি চাপ গ্রীল রোস্ট সাদিয়াস কিচেনে!
  • নগরীতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে উপজেলা স্বাস্থ্য সহকারী!

জামালুদ্দিন হাওলাদার, চট্টগ্রাম :
চট্টগ্রাম মহানগরের চকবাজার মিষ্টিমুখে দধি গাঢ় করতে ব্যবহার করা হচ্ছে সাদা চকপাউটার (ক্যামিকেল)। যার মধ্যে লুকিয়ে আছে নিরব ঘাতক ক্যান্সারের সব ধরণের জিবানু। কিডনি নষ্টসহ পেটের পীড়াদায়ক নানা রোগ শরীরে বাসা বাধাসহ মৃত্যুর ঝুঁকিও রয়েছে এই ক্যামিকেলে। বুধবার দুপুর পৌনে দুইটার দিকে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুস সোবহানের পরিচালিত ভ্রাম্যমান আদালতে বিষয়টি ধরা পড়ে।
এর আগে দুপুর দেড়টার দিকে নগরের নিউমার্কেটের আমতল দারুল ফজল মার্কেটে অবস্থিত ‘সাদিয়াস্ কিচেনে’ বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা কয়েকদিন আগের ‘বাসি চাপ, মুরগীর রোস্ট ও গ্রিল’ আব্দুস সোবহানের একই অভিযানে ধরা পড়ে।
তবে রহস্যজনক কারণে প্রতিষ্ঠান দুইটির বিরুদ্ধে আইনগত কোনো ব্যবস্থা না নিয়েই চেপে যান দেশের জনসাধরনের নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার দায়িত্বে থাকা অভিযানের সংশ্লিষ্ট কর্তারা।
‘চকপাউটার মিশ্রিত দধি, বাসি চাপ, মুরগীর রোস্ট ও গ্রীলে’ খাওয়ার ফলে স্বাস্থ্যহানীর কোনো ঝুঁকি আছে কি-না জানতে চাওয়া হয় চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরীর নিকট। সিভিল সার্জন বলেন, চকপাউটার এক ধরণের ক্যামিকেল। খাবারের সঙ্গে এসব যদি পেটে যায়, তাতে ক্যান্সার আক্রান্তের পাশাপাশি কিডনি রোগে প্রাণ হানি ঘটতে পারে। তাছাড়া পেটের পীড়া দায়ক নানান মরণব্যাধি শরীরে বাসা বাধে। যা দীর্ঘ সময় ভোগার পর মৃত্যুর দিকে নিয়ে যেতে পারে।
অভিযানে থাকা নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চট্টগ্রাম মেট্রো’র অফিসার বশির আহমেদ গণমাধ্যমকে জানান, এদিন আমরা তিনটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়েছি। এরমধ্যে নগরের এনায়েত বাজার মোড়ে অবস্থিত রয়েল বাংলা সুইটস্-এ কিছু অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। যার কারণে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। নগরের চকবাজার ‘মিষ্টি মুখ’ ও দারুল ফজল মার্কেটের ‘সাদিয়াস্ কিচেন’ পরিদর্শন করা হয়েছে। সেখানেও কিছু অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। তবে এসব প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা বা অন্যকোনো শাস্তি না দিয়ে শুধুমাত্র সতর্ক করা হয়েছে।
যদিও নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৮ অনুসারে খাবারে ক্যামিকেল (চকপাউটার) ব্যবহারের অপরাধে প্রতিষ্ঠান সিলগালাসহ পাঁচ লক্ষ টাকা জরিমানা করার বিধান রয়েছে।
একইভাবে ‘বাসি চাপ, মুরগীর রোস্ট ও গ্রিল’ বিক্রির অপরাধে তিন লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানাসহ প্রয়োজনে বন্ধ করে দেওয়ার বিধান রয়েছে বলে চট্টগ্রাম জজ কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও মানবাধিকার সংগঠক এডভোকেট মো. আয়াত উল্লাহ জানান।
তবে একই অপরাধের কারনে একটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানাসহ সতর্ক করা হয়েছে, অথচ অপর প্রতিষ্ঠানকে কোনো ধরণের শাস্তির আওতায় না আনার পেছনে কোনো রহস্য আছে কিনা জানতে চাওয়া হয় বশির আহমেদের নিকট। কিন্তু এই বিষয়ে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তাছাড়া চকবাজার মিষ্টি মুখে দধিতে জীবন নাশক চকপাউটার ব্যবহারের বিষয়টি ধরা পড়ার পরও কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কি-না বারবার প্রশ্ন করেও কোনো উত্তর মিলেনি।
চট্টগ্রাম জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তার দপ্তর সূত্রে জানাগেছে, গত চারদিন ধরে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবদুস সোবহান চট্টগ্রামে অবস্থান করছেন। এ সময়ে তিনি বিভিন্ন হোটেল, রেষ্টুরেন্ট ও খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চট্টগ্রাম মেট্রোর কর্মকর্তা বশির আহমেদ, সিটি কর্পোরেশনের স্যানিটারি ইন্সপেক্টর ইয়াছিনুল হক চৌধুরী ও কর্ণফুলী উপজেলায় নিজ বেতনে স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সহযোগি হিসেবে দায়িত্বে থাকা হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য সহকারী (ইপিআই টেকনিশিয়ান) মনোয়ারা বেগম মনি উপস্থিত ছিলেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নিয়মানুসারে অভিযান কালে কোনো অসঙ্গতি ধরা পড়লে প্রতিষ্ঠান সিলগালাসহ জেল-জরিমানার বিধান রয়েছে। তবে রহস্যজনক কারণে দুই/একটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা ব্যতীত অভিযান সংশ্লিষ্টরা বাকিসব প্রতিষ্ঠানের অপরাধ (অসঙ্গতি) চেপে যান।