ই-পেপার | বৃহস্পতিবার , ২ মে, ২০২৪
×

বাংলাদেশ জেনোসাইড ‘৭১-এর জাতিসংঘ স্বীকৃতির দাবিতে সারাদেশে মানববন্ধন শুরু

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের দ্বারা সংঘটিত জেনোসাইডের জাতিসংঘ স্বীকৃতির দাবিতে সপ্তাহব্যাপী মানববন্ধন-সমাবেশ কর্মসূচি আজ সারাদেশে শুরু হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ প্রতিষ্ঠাব্রতী সংগঠন ‘আমরা একাত্তরের’ উদ্যোগে সংগঠনের চেয়ারপারসন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব জামান আজ সকাল ১১টায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘর প্রাঙ্গণে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।

সমাবেশে আমরা একাত্তরের প্রধান সমন্বয়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা হিলাল ফয়েজী বাংলাদেশ জেনোসাইডের জাতিসংঘের স্বীকৃতির দাবিতে সারাবিশ্বে জনমত গড়ে তুলতে দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে একত্রিত হয়ে বিশ্ব জনমত গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ জেনোসাইডের জাতিসংঘ স্বীকৃতি আদায়ের দাবিতে  ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার রাজনীতিক, জেনোসাইড বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকার কর্মীদের সমাবেশ, প্রদর্শনী, সেমিনার ও আলোচনার সভার আয়োজন করছে। জাতিসংঘ স্বীকৃতির দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট নারী নেত্রী দিল আফরোজ দিলু, ট্রেড ইউনিয়ন নেতা সমীরণ সরকার, আমরা একাত্তরের কেন্দ্রিয় সমন্বয়ক এনামুল আজিজ রুমি, প্রকৌশলী উত্তম কুমার দাশ, সাংবাদিক মাহফুজা জেসমিন ও সাংবাদিক রাকিবুল আলম রুশো, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কানিজ গোফরানি কোরায়শি, বিশিষ্ট রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী মঞ্জুয়ারা রশীদ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ডানা নাজলি প্রমুখ।  

সমাবেশে বক্তারা মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত জেনোসাইডের জাতিসংঘ স্বীকৃতির দাবি জানিয়ে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের নয়মাসে বাংলাদেশের শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, ছাত্র, কৃষক ও সাধারণ নিরীহ মানুষসহ নারী ও শিশুদের ওপর যে বর্বরোচিত নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে, তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫২ বছর পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু জাতিসংঘ আজো একে জেনোসাইড হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি।
বক্তারা এই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত দেশে-বিদেশে আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

বক্তারা জানান, আজ ময়মনসিংহ, যশোর, দিনাজপুর, নেত্রকোনা ও কুমিল্লা জেলায় সংগঠনের জেলা আহ্বায়ক কমিটির উদ্যোগে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। আগামী সাত দিন দেশের অন্যান্য জেলায় এই মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।  

উল্লেখ্য, জেনোসাইড নিয়ে গবেষণা করে বিশ্ব স্বীকৃত এমন চারটি সংগঠন ১৯৭১ সালের বাংলাদেশে পরিচালিত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বর নির্যাতনকে ‘জেনোসাইড’ মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তা হলো; লেমকিন ইনস্টিটিউট ফর জেনোসাইড প্রিভেনশন, জেনোসাইড ওয়াচ, ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিশন অব সাইটস অব কনসাইন্স এবং ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব জেনোসাইড স্কলার্স।
বাংলাদেশ সরকার ২০১৭ সালে ২৫ মার্চকে জাতীয় জেনোসাইড দিবস ঘোষণা করে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবছর ১৯ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত জেনেভায় বাংলাদেশ জেনোসাইডের ওপর এক প্রদর্শনীর আয়োজন করে।   

এছাড়াও  গত ১১ সেপ্টেম্বর থেকে জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের  ৫৪তম অধিবেশন জেনেভায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই অধিবেশনের পাশাপাশি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত জেনোসোইডের স্বীকৃতির দাবিতে দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনগুলোর আলোচনা, সমাবেশ ও সেমিনার আয়োজন করছে। এরই অংশ হিসেবে ‘আমরা একাত্তর’ দেশে-বিদেশে এই কর্মসূচি পালন করছে।