ই-পেপার | শুক্রবার , ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
×

কক্সবাজারে জোয়ারের পানিতে ১৫০ গ্রাম প্লাবিত

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকায় স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ-ছয় ফুট উচ্চতায় পানি বেড়ে দেড় শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া ঝড় বৃষ্টিতে ১৯১টি ঘর বিধ্বস্ত এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ হাজার ৭৩২টি ঘর। ভেঙেছে রাস্তাঘাট।

সোমবার রাতে আশ্রয় কেন্দ্রে জরুরি আশ্রয় নিয়েছেন ১ লাখ ৭ হাজার ৫৭০ জন বাসিন্দা। আবহাওয়া স্বাভাবিক হওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠা ১ লাখ ৭ হাজার ৫৭০ জন মানুষ মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) সকাল থেকে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যাচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অস্বাভাবিক জোয়ারে কক্সবাজার পৌরসভার টেকপাড়া, সমিতিপাড়া, নাজিরারটেক, কুতুবদিয়াপাড়া, খুরুশকুল, চৌফলদন্ডী, ঈদগাঁওর পোকখালীর গোমাতলী, কালিরছড়া, কুতুবদিয়ার লেমশীখালী, উত্তরধুরং, মহেশখালীর ধলঘাটা, মাতারবাড়ি, টেকনাফের সেন্টমার্টিন দ্বীপ এলাকার দেড় শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। জোয়ারের উচুঁ ঢেউয়ে কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভসহ বিভিন্ন উপজেলার সড়ক-উপসড়ক ও বেড়িবাঁধের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ জানান, জেলায় ৭৯৮ হেক্টর রোপা আমন, ৮৪ হেক্টর সবজি ও ৩৯ হেক্টর পানের বরজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তলিয়ে গেছে ৮২৯টি মাছের ঘের।

এদিকে মঙ্গলবার সকাল থেকে আবহাওয়া স্বাভাবিক হওয়ায় বিমান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক মো. গোলাম মোর্তজা হোসেন।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, জোয়ারের পানির তীব্রতায় টেকনাফের সেন্টমার্টিনে কোস্টগার্ড থেকে নেভি ঘাট সড়ক এবং বাজারপাড়া সড়কের ৯৫ ভাগ ভেঙে গেছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে তৈরি করা আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ও স্থানীয়দের প্রায় শতাধিক বসতবাড়ি। এ পর্যন্ত প্রায় ১৮টি মাছ ধরার ট্রলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

মাতারবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু হায়দার বলেন, জোয়ারের তীব্রতায় মাতারবাড়ি-চাইল্লাতলী সড়ক ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ইউনিয়নের কুহুলিয়া নদীর ধারাখাল রাস্তা, ওয়াপদা পাড়া (বান্ডি সিকদার পাড়া), ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাইটপাড়া, জেলেপাড়া, বানিয়াকাটা এবং জালিয়াপাড়া এলাকার বেড়িবাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি। চরম ভোগান্তিতে পড়েছে স্থানীয়রা। শুধু রাতে নয় মঙ্গলবার সকালেও জোয়ারের পানিতে ডুবে যায় এসব এলাকা।

এছাড়া পেকুয়ার মগনামা-রাজাখালী, কুতুবদিয়ার আলী আকবর ডেইল পাগলির পাড়া, কাহারপাড়, লেমশীখালী হাবিউল্লাহর দোকান এলাকা, কৌয়ারবিল ঘিলাছড়ি থেকে ডিন্দাপাড়া পর্যন্ত, দক্ষিণ ও উত্তর-পশ্চিমসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে বলেও জানান চেয়ারম্যান।

পানি উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. তানজির সাইফ আহমেদ বলেন, দু-একটি এলাকা ছাড়া আমাদের কাছে যে তথ্য এসেছে তাতে বাঁধের মেজর কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে প্রকৃত তথ্য পেতে আমাদের দু-একদিন সময় লাগবে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করা হচ্ছে, পাশাপাশি ভেঙে যাওয়া বাঁধ সংস্কার ও উঁচু করার সুপারিশ করা হচ্ছে।

কক্সবাজার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনিসুর রহমান বলেন, জোয়ারের পানি এখনো আসা-যাওয়া থাকায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ চূড়ান্ত হয়নি। তবে পেকুয়ার মগনামা-রাজাখালী সড়ক, মহেশখালী-মাতারবাড়ি সড়ক এবং সেন্টমার্টিনের কয়েকটি সড়কের ক্ষতি হয়েছে। পানি নেমে গেলে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে।

টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. এরফানুল হক চৌধুরী বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে সমুদ্রে বাড়ন্ত জোয়ারের ঢেউয়ের আঘাতে কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভের টেকনাফে দুই অংশে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে সড়কটি। জোয়ারের পানি স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে বেশি ছিল। এতে সোমবার রাতে জোয়ারের সময় ঢেউয়ের আঘাতে টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের বাহারছড়াস্থ শশ্মান এলাকায় মেরিন ড্রাইভের দুটি অংশে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। যেখানে সড়কের ৬-৭ হাত করে অংশ ভেঙে গেছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. কবির হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে জেলায় ৯২১ হেক্টর ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মধ্যে রোপা আমন ৭৯৮ হেক্টর, সবজি ৮৪ হেক্টর ও পানের বরজ ৩৯ হেক্টর। তলিয়ে গেছে ৮২৯টি মাছের ঘের।

আবহাওয়া অধিদপ্তর কক্সবাজার অফিসের আবহাওয়াবিদ আবদুল হামিদ মিয়া বলেন, শক্তি হারিয়ে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এখন স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। কক্সবাজারসহ সব সমুদ্র বন্দর থেকে বিপদ সংকেত নামানো হয়েছে। রয়েছে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত। অমানিশায় এ ঝড় আসায় স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের পানির উচ্চতা বেড়েছে উপকূলে। কক্সবাজারে ৩-৫ ফুট উচ্চতায় বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাস হয়েছে।