ই-পেপার | বৃহস্পতিবার , ২৮ মার্চ, ২০২৪
×

বঙ্গোপসাগর থেকে ৪২ শতাংশের বেশি মৎস্য আহরণ বেড়েছে

প্রতীকী ছবি

গত ১৩ বছরে বঙ্গোপসাগর থেকে প্রায় ৪২ শতাংশের বেশি সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ বেড়েছে । ২০০৯-১০ অর্থবছরে বঙ্গোপসাগর থেকে ৫ লাখ ১৭ হাজার ২৮১ টন এবং সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে সামুদ্রিক মৎস্য আহরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে রেকর্ড ৭ লাখ ৩৪ হাজার ৫৯৪ টন।

অর্থাৎ গত ১৩ বছরে সমুদ্র থেকে মৎস্য আহরণ বেড়েছে ২ লাখ ১৭ হাজার ৩১৩ টন বা ৪২ শতাংশের বেশি। বিশ্লেষকরা বলছেন, বঙ্গোপসাগরে সামুদ্রিক মৎস্য আহরণের পরিমাণ বাড়লেও বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ মাছের আহরণের পরিমাণ বাড়াতে হবে।

তাছাড়া মৎস্য আহরণের পর কী পরিমাণ মাছ সমুদ্রে আগামী বছরের জন্য রেখে দেয়া হচ্ছে সেটার বিষয়ে গবেষণা প্রয়োজন। চাহিদা থাকলেও ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সমুদ্রগামী জাহাজ কিংবা ট্রলারকে বিশেষ দিকনির্দেশনা দেয়ার দাবি জানান তারা।

সামুদ্রিক মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, সমুদ্রে মাছের পর্যাপ্ততা নিশ্চিতে ওভার ফিশিং বা অতিরিক্ত মাছ শিকার বন্ধ করতে হবে। বিদেশী জাহাজ কোনোভাবেই যেন দেশের সমুদ্রসীমায় ঢুকে মাছ শিকার করতে না পারে। কারণ এরা প্রয়োজনীয় জাতের মাছ রেখে অপ্রয়োজনীয় মাছ শিকার করে সমুদ্রে ফেলে দিয়ে যায়। এতে করে মাছের সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্রের ভারসাম্য নষ্ট হয়। এজন্য গভীর সমুদ্রে নিরাপত্তা বাড়াতে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে সরকারকে।

সামুদ্রিক মৎস্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১৩ অর্থবছরে সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ বেড়েছে প্রায় ২ লাখ ১৭ হাজার ৩১৩ টন। এমনকি গত এক অর্থবছরের ব্যবধানে মাছের আহরণ বেড়েছে ২৮ হাজার ৭২৩ টন। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সমাপ্ত ২০২১-২২ অর্থবছরে সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ করা হয়েছে রেকর্ড ৭ লাখ ৩৪ হাজার ৫৯৪ টন। যেখানে আগের দুই বছরে অর্থাৎ ২০২০-২১ অর্থবছরে ৭ লাখ ৫ হাজার ৮৭১ টন এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৬ লাখ ৮৯ হাজার ১০৪ টন আহরণ করা হয়।

এছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৬ লাখ ৫৯ হাজার ৯১১ টন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৬ লাখ ৫৪ হাজার ৬৮৭, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৬ লাখ ৩৭ হাজার ৪৭৬, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৬ লাখ ২৬ হাজার ৫২৮, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৫ লাখ ৯৯ হাজার ৮৪৬, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৫ লাখ ৯৫ হাজার ৩৮৫, ২০০৯-১০ অর্থবছরে ৫ লাখ ১৭ হাজার ২৮১ টন সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ করা হয়েছিল।

এদিকে সামুদ্রিক মৎস্য অধিদপ্তরের আওতায় বর্তমানে সমুদ্রে মৎস্য আহরণে নিবন্ধিত বাণিজ্যিক ট্রলার রয়েছে ২৩১টি। যার মধ্যে ফিশিংয়ে নিয়োজিত আছে প্রায় ২২০টি। বাণিজ্যিক নৌযানের মধ্যে রয়েছে চিংড়ি ট্রলার, ট্রায়াল ট্রিপ বটম, বটম ট্রলার, মিডওয়াটার ট্রলার এবং মিডওয়াটার রূপান্তরিত ট্রলার। সামুদ্রিক নৌযানের অনুমোদন আছে ৬৭ হাজার ৫৬৯টির। যার মধ্যে ইঞ্জিনচালিত নৌযান ৩২ হাজার ৭৫৯ এবং ইঞ্জিনবিহীন নৌযান ৩৪ হাজার ৮১০টি। গত অর্থবছরে আহরণ করা শীর্ষ ১০টি মাছ হলো সার্ডিন, ম্যাকারেল, ইলিশ, ছুরি, পোয়া, রূপবান, লইট্টা, চিংড়ি, কাঁটামাছ ও রূপচাঁদা।

সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তরের পরিচালক (সামুদ্রিক) ড. মো. শরীফ উদ্দিন বলেন, সমাপ্ত অর্থবছরে বঙ্গোপসাগর থেকে প্রায় ৭ লাখ ৩৪ হাজার টনের বেশি মৎস্য আহরণ করা সম্ভব হয়েছে। এত পরিমাণ মাছ আগে কখনো আহরণ করা হয়নি। আমাদের সামুদ্রিক ব্যবস্থাপনা জোরদার করার কারণে সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ প্রতি বছর বাড়ছে। বছরে ৬৫ ও ২২ দিনের দুটি নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে সমুদ্রে মা মাছের প্রজনন বাড়ছে। এ সময়ে সমুদ্রে সব ধরনের মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ রাখা হয়।

২০১২ সালে মিয়ানমার ও ২০১৪ সালে ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তির পর নতুনভাবে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার এলাকা বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় যুক্ত হয়েছে। এরপর সামুদ্রিক মৎস্য আহরণকে অগ্রাধিকারমূলক খাত চিহ্নিত করে বছরে দুবার বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধসহ একাধিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রাশেদ-উন-নবী বলেন, সামুদ্রিক মৎস্য আহরণে গত অর্থবছরে রেকর্ড করেছে বিষয়টি দেশের জন্য বড় অর্জনের। কিন্তু সমুদ্র থেকে কী পরিমাণ মাছ প্রতি বছর তুলে নেয়া হচ্ছে এবং আগামী বছর কী অবস্থায় আহরণ সম্ভব হবে তার পরিসংখ্যানগত গবেষণা জরুরি। শুধু মৎস্য আহরণ বাড়ালেই হবে না তার সঙ্গে সমুদ্রে কী পরিমাণ মাছ আছে তার জন্য স্টক অ্যাসেসমেন্ট দরকার। কিন্তু এগুলো করা হচ্ছে না।

তাছাড়া অন্যান্য দেশে যেখানে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে সমুদ্র থেকে মৎস আহরণ করা হয়, সেখানে আমাদের প্রযুক্তি পুরনো। সরকারের নীল অর্থনীতি ব্যবহার নিয়ে যে পরিকল্পনা আছে সেখানে যোগ্য লোকের সংকট আছে। নীল অর্থনীতির সক্ষমতা থাকলেও সেগুলো ব্যবহারে এখনো সঠিক পরিকল্পনা নেয়া হয়নি বলে মনে করেন এ বিশ্লেষক।

তবে গবেষকরা বলছেন, সমুদ্রে ৪০ থেকে ১০০ মিটার এলাকায় কোন কোন ট্রলার বা জাহাজ মাছ ধরবে তা নির্ধারিত থাকলেও সে নিয়ম মানা হচ্ছে না। এজন্য জাহাজের মালিকদের নিয়মের মধ্যে আনতে হবে। এতে বাণিজ্যিক নৌকাগুলোর মাছ আহরণের হিসাবের তারতম্য দেখা যায়। অন্যদিকে সীমানা পরিবর্তনের কারণে বড় ট্রলার বা জাহাজগুলো নৌকার এলাকার মধ্যে ঢুকে গেলে অনেক মাছ নষ্ট হয়ে যায়। এসব কারণে সমুদ্রে জাহাজ চলাচলে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত রিপোর্ট