ই-পেপার | শুক্রবার , ২৯ মার্চ, ২০২৪
×

বর্তমান ও ভবিষ্যত তোমাদের, নিজকে গড়ে নাও–চবি শিক্ষার্থীদের শিক্ষামন্ত্রী

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় (চবি)সহ সকল তরুন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, সময় এখন তোমাদের। বর্তমান তোমাদের, ভবিষ্যতও তোমাদের। কাজেই তোমরা ঠিক করে নাও নিজকে কিভাবে গড়ে তুলবে। মানবতাবোধ মমত্ববোধ ইতিহাসবোধ জাগ্রত করে দেশপ্রেমের মন্ত্রে উদ্দীপ্ত হয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে নিজেকে ও দেশকে এগিয়ে নেবে- না পেছনে পড়ে থাকবে। তিনি বলেন, বিশ^বিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীদের শুধু সনদ দিয়ে ছেড়ে দিলে হবে না, তাদেরকে বাস্তব জীবনের কর্মোপযোগি করে তুলতে হবে। দশ বিশ বছর পূর্বের গতানুগতিক জ্ঞান না দিয়ে সময়োপযোগি কর্মমূখি জ্ঞান দিতে হবে।

মন্ত্রী আজ চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান অনুষদ মিলনায়তনে বিশ^বিদ্যালয় আয়োজিত ‘‘বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ” শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতাকালে এসব কথা বলেন। খ্যাতনামা ইতিহাসবিদ ও বিশ^বিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রফেসর ড. মুনতাসির মামুন সেমিনারে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়-অনেক প্রফেসর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে থিসিস করেন কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কোন থিসিস হয়নি। জাতীয় চার নেতার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। আর যদি হয়েও থাকে তা সংখ্যায় এতো নগন্য যে উল্লেখ করার মতো নয়। কাজেই বঙ্গবন্ধু গবেষণা, বঙ্গবন্ধু চর্চা, তার আদর্শ ধারণ ও লালন বাড়াতে হবে। এতে দুঃখ করে বলা হয় – অনেক প্রাইভেট বিশ^বিদ্যালয়ে বাংলা সাহিত্য বা ইতিহাসের মতো বিভাগ থাকেনা। এসব বিশ^বিদ্যালয় ইংরেজিতে পড়তে ও পড়াতে বাধ্য করে। এমন অপচর্চা বন্ধ করতে হবে। বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, ইতিহাস, পদার্থ ও রসায়নের মতো বিষয়গুলো বাধ্যতামূলক করতে হবে। তবেই তরুন প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস জেনে বঙ্গবন্ধুকে ধারণ ও লালন করতে পারবে। প্রবন্ধকার আফসোস করেন বলেন, বর্তমানে লিয়াজোঁ আর লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি শিক্ষকদের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। পদ পদবীর জন্য শিক্ষকরা এদিক সেদিক দোড়ঝাঁপ করেন। এ চর্চা বন্ধ করতে হবে। প্রকৃত বঙ্গবন্ধু প্রেমিক দুঃসময়ের কান্ডারীদের শক্ত করে আঁকড়ে রাখতে হবে।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সকলের মধ্যে ইতিহাসবোধ থাকা জরুরি। না হলে শেকড়কে অস্বীকার করা হয়। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু বহু আগ থেকে স্বাধীনতার জন্য কাজ করেছেন। কমরেড মনি সিংসহ অনেকে এ বিষয়ে বলেছেন। বঙ্গবন্ধুর পুরো রাজনৈতিক জীবন স্বাধীন বাংলাদেশ গড়তে ব্যয় করেছেন। কেননা তিনি বুঝতে পেরেছিলেন পাকিস্তান কাঠামোর মধ্যে থেকে বাংলাদেশের অধিকার আদায় হবে না।

শিক্ষামন্ত্রী আরো বলেন, বিশ^বিদ্যালয়গুলোকে লেজুড়বৃত্তি পরিহার করে মুক্ত বুদ্ধি ও মুক্ত চিন্তার তীর্থস্থান হয়ে উঠতে হবে। জ্ঞানদানের পাশাপাশি নতুন জ্ঞান সৃষ্টির প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে। নতুন নতুন গবেষনা ও তার ফলাফল দেশীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশ করতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শিক্ষার্থীদের তৈরি করতে হবে। তাদের মধ্যে শেখার দক্ষতা তৈরি করে দিতে হেব। তিনি বলেন, আগামী জুলাই থেকে বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হচ্ছে। কাজেই সবাইকে প্রশিক্ষিত হতে হবে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, অনেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাজেট নিয়ে দুঃখ করেন। প্রকৃতপক্ষে ২৯টি মন্ত্রণালয়ের বাজেট প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে শিক্ষার সাথে জড়িত। কাজেই হতাশ হওয়া যাবে না। তিনি বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম প্রণীত হয়েছে। মুখস্থ নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা উঠে গেছে। সনদ সর্বস্ব শিক্ষা দিয়ে এখন চলবে না। পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়াতে নতুন আঙ্গিকে চিন্তা করতে হবে। গতিশীল প্রযু্িক্তর সাথে তাল মেলাতে হবে। বিশ^বিদ্যালয়ের এলামনাইদের থেকে ফান্ড তৈরির সুযোগ আছে উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, একাডেমিক ক্যালেন্ডার তৈরি করে তাদের দেখানো ও সে মোতাবেক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। সরকার সব সহেেযাগিতা করবে।

ভিসি প্রফেসর ড. শিরিণ আখতার এর সভাপতিত্বে সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে প্রোভিসি প্রফেসর বেনু কুমার দে, কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মাহবুবুল হক, শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী, প্রক্টর ড. মো. নুরুল আজিম সিকদার বক্তৃতা করেন।

পরে মন্ত্রী বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস এন্ড ফিশারিজ এর নব নির্মিত একাডেমিক ভবন উদ্বোধন করেন।