ই-পেপার | বৃহস্পতিবার , ২৮ মার্চ, ২০২৪
×

কেএনএফ আতংক; নিরাপত্তা হীনতায় পাড়া ছেড়েছে ১১ পরিবার

বান্দরবানের রুমায় নিরাপত্তা হীনতার কারনে থানচি মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যলয়ে আশ্র‍য় নিয়েছে ১১ পরিবার। রবিবার (২৮ মে) দুপুর সাড়ে ১২ টায় থানচি মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যলয়ে আশ্রয় নেন পাড়া ছেড়ে আসা ১১ পরিবারের ৩২ জন সদস্য।

আশ্রয় নেওয়া সকলেই রুমা উপজেলা ৩ নম্বর রেমাক্রী প্রাংসা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাকলাই পাড়া বাসিন্দা। আশ্রয় শিবিরের আশ্রয় নেওয়া বাকলাই পাড়ার কারবারি ( পড়া প্রধান) থংলিয়াত বম বলেন,

আমাদের পাড়াতে মোট ৩৭ পরিবার ছিল । কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এর বিরুদ্ধে সন্ত্রাস বিরোধী সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানের ৬ মাস আগেই ২৬ পরিবার অন্যত্র চলে গিয়েছেন। আমরা ১১ পরিবার কোন রকমে নিজ ভিটেমাটি আঁকড়ে ছিলাম।

পুরুষরা দিনের বেলা পাহাড়ের জুম ঘরে পালিয়ে থাকতো। রাতে বৌ- বাচ্ছাদের রান্না করার খাবার নিয়ে আবার চলে যেত জুমে অথবা জঙ্গলে। এভাবে গত অক্টোবর ২০২২ হতে মে ২০২৩ গত ৯ মাস ভয়-আতঙ্কের মধ্যে অনাহারে- অর্ধহারে নির্ঘুম সময় পার করছিলাম।

আমরা আমাদের কষ্টের কথা রাজনৈতিক নেতা ও অনেক জনপ্রতিনিধিদের জানিয়েও কোন লাভ হয় নি। অবশেষে নিরুপায় হয়ে গতকাল শনিবার অনেক কষ্ট করে পাহাড়-জঙ্গল পেড়িয়ে জীবনের করুন পরিস্থিতির কথা মুঠোফোনের মাধ্যমে উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হলে, থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থানচি সদরে আসার পরামর্শ দিলে আমরা আমাদের বউ-বাচ্চা, নাতি-নাতনীদের নিয়ে নিরাপদ আশ্রয় খোঁজে থানচিতে চলে আসছি।

আশ্রয় কেন্দ্রে আসা একই পাড়ার রোলরেম বম (৫৩) বলেন, আমাদের সকল পরিবারের গৃহপালিত হাঁস মুরগি,গরু ছাগল, গয়াল, শুকর, ধান, ঘরবাড়ী সব রেখে জীবন বাঁচানোর জন্য, থানচি সদর প্রশাসনের ব্যবস্থা করে দেয়া আশ্রয় শিবিরে আশ্রয় নিয়েছি। পরিস্থিতির শান্ত না হওয়া পর্যন্ত আমাদেরকে এখনে রাখার জন্য আবেদন করছি।

আশ্রয় শিবিরের আসা বাকলাই পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জাওরামতং বম বলেন, গত আছর অক্টোবর ২০২২ হতে এলকার পরিস্থিতির অবস্থা খুবি খারাপ। সেই থেকে আদ্যবধি পর্যন্ত স্কুল ও বন্ধ আছে। ছেলে মেয়ে ও নেই। খুব কষ্টে জীবন-যাপন করতে হযেছে আমাদের। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোন সময় বাড়ীতে কোন সময় জঙ্গলে রাত কাটতে হয়েছে। স্বর্বশেষ নিরুপায় হয়ে এই আশ্র‍য় কেন্দ্রে আসতে বাধ্য হয়েছি।

থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা( ইউএনও) মুহা: আবুল মনসুর বলেন, গত কাল রুমা উপজেলার কয়েকটি পরিবার নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য যোগাযোগ করার প্রেক্ষিতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদেরকে মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যলয়ে আশ্রয় ও খাবারের ব্যাবস্থা করা হয়েছে।

ইউএনও আরো বলেন, সবাই রুমা উপজেলার বাসিন্দা হলেও নিরাপদ দূরত্ব ও যোগাযোগ সুবিধার কারনে তারা থানচিতে আশ্রয় চেয়েছেন। মানবিকতার কারনে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে থানচি মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয়ে ব্যবস্থা করেছি এবং তাদের খাওয়া ব্যবস্থাও করা হয়েছে। পরিস্থিতির শান্ত না হওয়াার পর্যন্ত তারা ওখানে আশ্রয়িত থাকতে পারবেন বলেও জানান এ কর্মকর্তা।