ই-পেপার | শুক্রবার , ২৯ মার্চ, ২০২৪
×

মোখা’র তান্ডব; মহেশখালীতে ৩ লবণ শ্রমিকের মৃত্যু

বাংলাদেশ একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীতে ঘূর্ণিঝড় মোখা’র তান্ডবে ৩ লবণ শ্রমিকের মৃত্যু,আহত ২০ বিধ্বস্ত ৫ শত বসতঘর। ঘূর্ণিঝড় মোখা যখন উপকূলীয় অঞ্চলে তাণ্ডব চালাচ্ছিল তখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মহেশখালী দ্বীপের লবণ শ্রমিক’রা ঝড়ের কবল থেকে লবণ ও পলিথিন সংরক্ষণের চেষ্টা করছিল। ওই সময় ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে তিন লবণ শ্রমিকদের মৃত্যু হয়েছে।

নিহত লবণ শ্রমিকরা হলেন- মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের কালাগাজীর পাড়া এলাকার আবুল ফজলের পুত্র রিদোয়ান (৩৫) পানিরছড়া এলাকার আকতার কবিরের পুত্র মুহাম্মদ নেছার (৩২),ও পানিরছড়া বারঘর পাড়ার মৃত মতনের পুত্র মোঃ আনছার।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায় -রবিবার (১৪ মে) সকাল ১০টায় লবণ সংরক্ষণ ও মাঠের পলিথিন উঠানোর জন্য আনুমানিক ৪০-৫০ জন শ্রমিক মাঠে যায়। মুখা’র তান্ডবে উত্তরের প্রচন্ড ঠান্ডা বাতাসের কারণে মাঠেই ১৫/২৫ জন অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয়রা তাদের কে মহেশখালী উপজেলা সদর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে আসেন। কর্তব্যরত চিকিৎসক ১৪ মে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে রিদওয়ান (৩৫) কে মৃত ঘোষণা করেন বাকিদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এসময় সোনা মিয়া নামের আরেক কৃষককে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তিনি মহেশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। পরবর্তীতে ২ জনের মৃত দেহ লবণের মাঠ ও লবণের গর্ত থেকে উদ্ধার করে স্থানীয়রা। হোয়ানক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মীর কাশেম চৌধুরী বিষয়টি সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। এ খবর পেয়ে দ্রুত মহেশখালী হাসপাতালে ছুটে যান- কক্সবাজার- ২, (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনের সাংসদ আলহাজ্ব আশেক উল্লাহ রফিক,মহেশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি প্রনব চৌধুরী। সাংসদ আলহাজ্ব আশেক উল্লাহ রফিক ৩ লবণ চাষীর মৃত্যুতে তিনি হতভম্ব হয়ে দু:খ প্রকাশ করেন। পরিবার পরিজনদের আস্বস্ত করেন পর্যাপ্ত সহায়তার।

অপরদিকে মোখা তান্ডব মহেশখালী বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ৫ শত কাঁচা বসতঘর ভেঙে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এলাকার শতাধিক পানের বরজ। এ ছাড়া একাধিক স্থানে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় গতকাল রোববার সকাল থেকে অনেকটাই বিদ্যুৎবিহীন মহেশখালী উপজেলা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, ১৪ মে সকাল ১০টার পর ঘূর্ণিঝড় মোখা’র প্রভাবে মহেশখালীতে দমকা হাওয়া বইতে শুরু করে। দুপুরে বাতাসের গতিবেগ আরও বেড়ে যায়। এতে বিভিন্ন এলাকায় কাঁচা ঘরবাড়ির ছাউনি উড়ে গেছে। অনেক স্থানে উপড়ে পড়েছে গাছ।

ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) ১১ নম্বর ইউনিট সোনাদিয়া দ্বীপের দলনেতা মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন জানান- কুতুবজোম ইউনিয়নের সোনাদিয়া দ্বীপেই অন্তত ১ শতর মত ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ঝড়ের সময় স্থানীয় বাসিন্দারা আশ্রয়কেন্দ্রে থাকায় জানমালের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর বাসিন্দারা আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়িতে ফিরে গেছেন।

মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইয়াছিন বলেন-মহেশখালীতে এরই মধ্যে প্রায় ৫শত ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এদিকে ঘূর্ণিঝড়ে একাধিক স্থানে বিদ্যুতের খুঁটি ও সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় গতকাল সকাল ১০টা থেকে উপজেলাটিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ১৫ মে সোমবার দুপুর ১.০০ টায় এ প্রতিবেদন লেখার সময়ও বিদ্যুৎ পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়ায় ভোগান্তিতে পড়েন উপজেলার একটি পৌরসভা ও আটটি ইউনিয়নের প্রায় ৬৪ হাজার গ্রাহক।

কক্সবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহেশখালী জোনাল অফিস সূত্র জানায়- ১৪ মে সকাল থেকে দমকা হাওয়া শুরু হলে বিদ্যুতের পাঁচটি খুঁটি ভেঙে যায়। এ ছাড়া একাধিক স্থানে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের ওপর গাছের ডালপালা ভেঙে পড়েছে। এ পরিস্থিতি বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রেখে বিদ্যুৎকর্মীরা সঞ্চালন লাইনের ওপর থেকে ভেঙে পড়া গাছের ডালপালাগুলো সরাতে কাজ করছেন।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহেশখালী জোনাল অফিসের উপমহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আল আমিন বলেন- ১৪ মে রাত নয়টার দিকে পৌরসভার কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ আবার শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।