ই-পেপার | শুক্রবার , ২৯ মার্চ, ২০২৪
×

বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বন্ধুত্বপুর্ণ গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান :চন্দ্রমোন পাটোয়ারি

বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধে প্রতিবেশি দেশ হিসেবে ভারত সাধ্যমত সবকিছু দিয়ে সহযোগিতা করেছিল। যুদ্ধে বাংলাদেশের ৩০ লক্ষ শহিদের সঙ্গে অনেক ভারতীয় সেনাও ও শহিদ হয়েছিলেন। ১৯৭১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত সরকারের গভীর বন্ধুতপুর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে। ২৮ মার্চ (সোমবার), গুয়াহাটিস্থিত বাংলাদেশ সহকারি হাইকমিশন মিশন আয়োজিত ৫৩ তম স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বাংলাদেশের সরকার প্রধান শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশের জনগণকে শুভেচ্ছা জানান মন্ত্রী পাটোয়ারি।

তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক অন্যন্য উচ্চতায় রয়েছে। তিনি জানান , ঢাকা-গুয়াহাটি বিমান চলাচল পুনরায় শুরু করা হবে। অসম সরকার শিলচর-সিলেট সরাসরি বাস সাভির্স চালু করতে যাচ্ছে। ভারত সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে স্থল পথ,নৌ-পথে যোগাযোগ উন্নয়নে আগ্রহী। কেন্দ্রীয় সরকার উত্তর-পূর্ব রাজ্য অসম সহ সেভেন সিস্টার রাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। সিলেট বিভাগের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সহ গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

সিলেটের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য শিলচরে ‘শিলচর-সিলেট উৎসব’ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তিনি বলেন, দু’দেশের বাণিজ্য,পর্যটন শিল্পের বিকাশ,ভাষা ও সাহিত্য, সংস্কৃতি বিনিময় এবং রেল ও সড়ক পথে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও এগিয়ে নিতে বন্ধুপ্রতিম দুই দেশ আন্তরিক ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। অসমের ব্রহ্মপুত্র নদ এবং বরাক-

কুশিয়ারী নদী খননের উদ্যাগ গ্রহন করা হয়েছে। নদী খনন কাজে ইতোমধ্যে ভারত সরকার ৫০ কোটি টাকা বরাদ্ধ করেছে । তিনি ১৯৭১ সালের স্মৃতিচারণ করে বলেন, আমি তখন ৮ম শ্রেনীর ছাত্র ছিলাম সেসময়ের দৈনিক পত্রিকা পড়ে মুক্তিবাহিনীর খবর জানতাম। আমার পিতা হাফলং-য়ে মুক্তি বাহিনীকে গ্যারিলা ট্রেনিং দিতেন। বাবার নিকট থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অনেক গল্প শুনেছি।

বিশেষ অতিথি বিধায়ক লরেঞ্চ ইচলারী বলেন, সম্প্রতি তিনি এক সরকারি প্রতিনিধিদলের সঙ্গেন বাংলাদেশ সফর করেন। বর্তমানে বাংলাদেশের সরকার প্রধান শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অনেক অবকাঠােমাগত উন্নয়ন করা হয়েছে। মিউজিয়াম পরিদর্শন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে অনেক তথ্য জেনেছি। বাংলাদেশে বসবাসরত জনজাতি সম্প্রদায়-কে সহযোগিতা করতে তিনি শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি অনুরোধ করেন। তিনি মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে গুয়াহাটি’তে নিযুক্ত বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনার ও মিশন প্রধান রুহুল আমিন বলেন,১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশের অন্তত ১কোটি শরণার্থীকে তৎকালীন ভারত সরকার আশ্রয় দিয়েছিল । অসমে সেসময় প্রায় ৩ লক্ষ মানুষ আশ্রয় গ্রহণ করেছিল। যুদ্ধে ভারত সরকার হাজার হাজার সৈন্য সহ সবকিছু দিয়ে সহযোগিতায় করায় তিনি ভারত সরকার এবং এদেশের জনগনের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।

তিনি বলেন, অসমের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য,পযর্টন শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশে এবং সম্পর্ক উন্নয়নে গুয়াহাটি মিশন নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। রুহুল আমিন বলেপন,বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্য গুলোর সাথে আমাদের চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে।

তিনি বলেন,ঢাকা-সিলেট-ডাউকি-শিলং-হয়ে গুয়াহাটি পর্যন্ত বাস সার্ভিস পুনরায় চালু করা হবে। সহকারি হাইকমিশনার আরও বলেন,অসম সহ উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর মানুষের জন্য ভিসা সহজ করা হয়েছে। উভয় দেশের মানুষ এখন সহজে ভ্রমনে করতে পারছেন । বাংলাদেশ-ভারতের ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নে গুয়াহাটি মিশন সবরকম সহযোগিতা করে যাবে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গুয়াহাটিস্থ ভুটানের কনসাল জেনারেল জিগমে থিমল্যে নামগয়াল, অসমম সরকারের ডেপুটি সেক্রেটারী অ্যাক্ট-ইস্ট পলিসি অ্যাফেয়ার্স মানবেন্দ্র প্রতাব সিংহ (আইএএস),বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি সেক্রেটারী ড.লক্ষ্মসমন (আইএএস),মেঘালয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মাহবুবুল হক,উপাচার্য জে,ডি শর্মা, গুয়াহাটি রয়েল গ্লোবাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সঞ্জয় প্রতাব সিংহ,ডাউন-টাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নারায়ন চন্দ্র তালুকদার, গুয়াহাটি কটন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. রমেশ চন্দ্র ডেকা মেঘালয় চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ এর সাধারণ সম্পাদক ডলি খংলো, ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ গুয়াহাটি চ্যাপ্টারের পরিচালক শাহ মোহাম্মদ ফরিদ।

এছাড়া উপস্থিত ছিলেন অসম সরকারের বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ,ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, শিল্পী ও সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। এছাড়াও অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের জৈন্তাপুর প্রেসক্লাব সভাপতি নূরুল ইসলাম, জৈন্তাপুর বিয়াম ডা: কুদরত উল্লাহ স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান বেলাল ও সাংবাদিক ইউসুফুর রহমান অংশ গ্রহন করেন।

অনুষ্ঠানে মহান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে অসমেরর বিভিন্ন সরকারী-বে-সরকারী কর্মকর্তা, শিক্ষক, সাংবাদিকদের সহকারি হাই কমিশনার রুহুল আমিন ও তার পত্নী ডঃ নবনীতা হক পুষ্প স্তবক ও উত্তরীয় দিয়ে সম্মান জানান। পরে স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।অনুষ্ঠানের সূচনায় দুদেশের জাতাীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়।