ই-পেপার | বৃহস্পতিবার , ১৮ এপ্রিল, ২০২৪
×

এখন লেখার চেয়ে সম্পাদনা করার মানুষ বেশি

সাংবাদিকতা পেশাটা এখন আর চ্যালেঞ্জিং কিংবা আকর্ষণীয় কোন পেশা নয়। অন্যান্য অনেক পেশার মতো এই পেশায়ও গভীরতা কমেছে। বাইরের চমকে সবাই মেরে কেটে বেরিয়ে যেতে চায়। ভেতরে গভীরতা কম।
ইদানীং নতুন কয়েকটি পত্রিকা বাজারে এসেছে এবং আসছে।‌ তারা হন্যে হয়ে ভালো সাংবাদিক খুঁজছে। কিন্তু ভালো মানের সাংবাদিক খুঁজে পাওয়া খুব সহজ কাজ নয় আর। তাই চালু পত্রিকাগুলোর দিকে পড়েছে তাদের চোখ। যারা কাজ করছে, একটু অভিজ্ঞতা হচ্ছে, তাদের দিকে বাড়িয়ে দিচ্ছে হাত।
জেনে নিচ্ছে কে কোথায় কত টাকা বেতন পায়, তারপর সেই বেতনের সঙ্গে আরও কিছু টাকা বাড়িয়ে নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে বলা‌ হচ্ছে। আবার অনেকেই আছেন, যারা নিজের প্রতিষ্ঠানে নিজেকে খুঁজে না পাওয়ায় চাকরি খোঁজেন।
এইতো দিন তিনেক আগে অন্য একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ফোন করে গোপনে আমাকে বলা হলো, আমারই এক সহকর্মী তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। আমি আমার সহকর্মীকে সে কথা জানতে দিইনি। তিনি যদি মনে করেন, ভাগ্য বদল করবেন, তাহলে আমি বাধা দেবার কে? আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে আমার প্রিয় কেউ কেউ চলে গেছে। তারা যে যুক্তিগুলো দিয়েছে, সেগুলো মেনে নিয়েছি বলে তাদের ধরে রাখার কথা ভাবিনি। শুধুমাত্র আবেগ দিয়ে কাউকে ধরে রাখা ঠিক নয়। জগৎটা অন্যরকম হয়ে গেছে। সংসারের আর্থিক ব্যবস্থাপনা যখন টলোমলো থাকে, তখন আদর্শের কথা হাস্যকর বলে মনে হয়।
আমি সারা জীবন চাকুরীজীবীদের কষ্টের গল্পগুলো শুনেছি। তাই প্রতিষ্ঠানের হর্তাকর্তাদের ব্যাপারে কোনদিন আবেগে আপ্লুত হইনি। আড়াই লাখ টাকার বেশি বেতন পাওয়া সাংবাদিকের যেরকম সংকীর্ণ মন দেখেছি, তাতে বুঝেছি, তেলবাজীকে ঈশ্বর ভাবা হলে চাকুরী জগতে বেহেশত বা স্বর্গ পাওয়া কঠিন কিছু নয়।
আগেই বলেছি, সাংবাদিকতার গভীরতা গেছে কমে। অনেকেই দুপাতা না লিখেই এডিট করতে বসে যান। অথচ আমি জানতাম, ভালো লিখতে না জানলে ভালো এডিট করা সম্ভব নয়। ‌আমার সে জানা ভুল ছিল কিনা, সে প্রশ্ন আমি করছি না, কারণ উত্তরটা সবাই জানে। কিন্তু এখন লেখার চেয়ে সম্পাদনা করার মানুষ এত বেশি বেড়ে গেছে যে, লেখাই হয় না, তার আবার সম্পাদনা!
নিজের ভাষাটা ঠিকভাবে না জানলে, সে ভাষায় ঠিকভাবে কথা বলতে না পারলে, ঠিকভাবে লিখতে না পারলে সাংবাদিকতা পেশাকে অমর্যাদা করা হয়। ‌ বাক্যবাগীশ তারুণ্যের মধ্যে নিজেকে উন্নত করার চেষ্টার চেয়ে মালিক বা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তেল মারার চেষ্টায় নিয়োজিত হতে দেখলে মন খারাপ হয়ে যায়।
এদের মধ্যে যখন প্রতিভাবান কাউকে দেখি, তখন একটু হলেও মনে হয়, সব আশা নিঃশেষ হয়ে যায়নি। এখনো এই পেশাটাকে নিয়ে ছোট করে হলেও স্বপ্ন দেখা যায়।

লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত রিপোর্ট