ই-পেপার | শুক্রবার , ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
×

মৃত্যুপুরী তুরস্ক-সিরিয়া, মৃতের সংখ্যা ২৪,০০০ ছাড়িয়ে: ৮৭০,০০০ মানুষের খাদ্যের প্রয়োজন

তুরস্ক-সিরিয়া ভূমিকম্পের ধ্বংসস্তুপ থেকে উদ্ধারকারীরা শনিবার আরো শিশুদের উদ্ধার করেছে। ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৪,০০০ ছাড়িয়েছে এবং বরফ শীতল তাপমাত্রা লাখ লাখ মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে, অনেকের চরমভাবে সাহায্যের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।

জাতিসংঘ সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ভূমিকম্পের পর দুই দেশে অন্তত ৮৭০,০০০ মানুষের জরুরিভাবে খাদ্যের প্রয়োজন, শুধুমাত্র সিরিয়াতেই ৫.৩ মিলিয়ন লোক গৃহহীন হয়ে পড়েছে।

গত সোমবারের ৭.৮-মাত্রার কম্পনের পরে আফটারশকগুলো মৃতের সংখ্যা বাড়িয়েছে এবং বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের জীবনের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর আন্তাকায়ার বাসিন্দা পেনশনভোগী ফিদান তুরান অশ্রু ভরা চোখে বলেন, ‘যখন আমি ধ্বংস হওয়া ভবন, মৃতদেহ দেখি, তখন এমন নয় যে আমি দুই বা তিন বছরে কোথায় থাকব তা দেখতে পাচ্ছি না, কার্যত আমি ভাবতে পারি না যে আমি আগামীকাল কোথায় থাকব।’

তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের বর্ধিত পরিবারের ৬০ জন সদস্যকে হারিয়েছি’। ‘ষাট! জন, আমি কি বলব? এটা ঈশ্বরের ইচ্ছা।’জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি তুরস্কের অন্তত ৫৯০,০০০ জন এবং সিরিয়ায় ২৮৪,০০০ জন সদ্য বাস্তুচ্যুত মানুষকে খাদ্য রেশন প্রদানের জন্য ৭৭ মিলিয়ন ডলার অর্থ সরবরাহের আবেদন করেছে। এতে বলা হয়েছে, তুরস্কে বাস্তুচ্যুতদের মধ্যে, ৫৪৫,০০০ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত এবং ৪৫,০০০ শরণার্থী রয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় শুক্রবার কুর্দি যোদ্ধা এবং সিরিয়ার বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে সুযোগ করে দেয়ার জন্য সকল পক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছে। আঙ্কারা এবং তার পশ্চিমা মিত্রদের কাছে একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসাবে বিবেচিত নিষিদ্ধ কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পাটি পুনরুদ্ধারের কাজ সহজ করার জন্য যুদ্ধে সাময়িক বিরতির ঘোষণা দিয়েছে।

বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় প্রায় ৪ মিলিয়ন মানুষ মানবিক সহায়তার উপর নির্ভর করে তবে তিন সপ্তাহে সরকার-নিয়ন্ত্রিত এলাকা থেকে কোনো সাহায্য বিতরণ করা হয়নি। সিরিয়ার সরকার বলেছে, তারা তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ভূমিকম্প কবলিত এলাকায় মানবিক সহায়তা বিতরণের অনুমোদন দিয়েছে। এই সপ্তাহে মাত্র দুটি সাহায্য কনভয় তুরস্ক থেকে সীমান্ত অতিক্রম করেছে, যেখানে তুরস্ক কর্তৃপক্ষ তাদের নিজস্ব একটি আরও বড় ভূমিকম্প ত্রাণ অভিযানে নিযুক্ত রয়েছে।

এক দশকের গৃহযুদ্ধ এবং সিরীয়-রাশিয়ান বিমান হামলা ইতিমধ্যে হাসপাতাল ধ্বংস করেছে এবং বিদ্যুৎ ও পানির ঘাটতি তৈরি করেছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস তুরস্ক ও সিরিয়ার মধ্যে নতুন আন্তঃসীমান্ত মানবিক সহায়তা কেন্দ্র খোলার অনুমোদন দেওয়ার জন্য নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। কাউন্সিল সম্ভবত আগামী সপ্তাহের শুরুতে সিরিয়া নিয়ে আলোচনার জন্য বৈঠক করবে।

তুরস্ক বলেছে,তারা সিরিয়ার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত অংশে দুটি নতুন রুট খোলার জন্য কাজ করছে। তুরস্কের কর্মকর্তারা বলছেন, ভূমিকম্পে ১২,১৪১টি ভবন ধ্বংস হয়েছে বা গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইস্তাম্বুল-ভিত্তিক বোগাজিসি ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মুস্তাফা এরদিক বলেন, ‘মেঝেগুলো একে অপরের ওপরে স্তুপ হয়ে আছে, যার মানে জীবিত কাউকে পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।’

প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পে ভবন ধসে পড়ার পর দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করা এক ঠিকাদারকে শুক্রবার আটক করেছে পুলিশ। ১৯৩৯ সালে ৭.৮-মাত্রার কম্পনে ৩৩,০০০ লোক মারা যাওয়ার পর এই কম্পনটি ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী এবং মারাত্মক। কর্মকর্তা ও চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তুরস্কে ২০,৬৬৫ জন এবং সিরিয়ায় ৩,৫৫৩ জন মারা গেছেন। নিশ্চিত মোট মৃত্যুর সংখ্যা এখন দাঁড়িয়েছে ২৪,২১৮ জন।