ই-পেপার | শনিবার , ২০ এপ্রিল, ২০২৪
×

বর্ষবরণের আয়োজন নেই কক্সবাজারে

বর্ষবরণের কোনো ধরনের আয়োজন নেই পর্যটন নগরী কক্সবাজারে। বিশেষ এ দিনে সৈকতসহ গোটা কক্সবাজারে লোকে লোকারণ্য হয়ে গেলেও কোনো আয়োজন চোখে পড়বে না।

তবে এবারও কয়েক লাখ পর্যটকের সমাগম হবে বলে আশা পর্যটন সংশ্লিষ্টদের।টুয়াকের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও পর্যটন বিশেষজ্ঞ এম এ হাসিব বাদল বলেন, নব্বই দশকের শেষ দিকে থার্টিফাস্ট নাইট উদযাপনে বেসরকারি টেলিভিশন কিংবা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি সৈকতে উন্মুক্ত অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। তারকা হোটেলগুলো আয়োজন করতো ইনডোর অনুষ্ঠান। যেখানে বহিরাগতরাও অংশ নিতে পারতেন। কিন্তু ২০১৭ সালে একসঙ্গে প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গা আগমন ঘটে।

সে থেকে নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ওই বছর তেকে থার্টিফাস্ট নাইটে সৈকতে সব ধরনের অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২০১৯ সালে করোনা মহামারীর পর পুরো পর্যটন নগরীই বন্ধ হয়ে যায়।ট্যুরস অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক) সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, থার্টিফার্স্ট নাইটে উন্মুক্ত কোনো আয়োজন নেই। তবে তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইজ, সায়মন বিচ রিসোর্ট ও রয়েল টিউলিপ সি পার্লসহ আরও কয়েকটি হোটেল ইনহাউজ গেস্টদের জন্য আয়োজন করছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। কিন্তু এবারও বাইরের কোনো অতিথিকে এসব উপভোগের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। তাই এবারের থার্টিফাস্ট নাইট বা নতুন বর্ষ বরণকেও ‘প্রাণহীন’ বলে উল্লেখ করছেন পর্যটকরা।কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. আবু সুফিয়ান বলেন, সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় এবারও বি উন্মুক্ত অনুষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে পর্যটকরা চাইলে রাত ১-২টা পর্যন্ত বিচে ঘুরতে পারবেন। এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বেশ কয়েকটি টিম মাঠে থাকবে। কিন্তু রাত দশটার পর হোটেলের সব বার বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পর্যটন সংশ্লিষ্টদের বরাত দিয়ে ট্যুরস অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক) সভাপতি আনোয়ার মোস্তফা জানান, থার্টিফাস্ট নাইট উৎসবের আগে বড়দিন ও শীতকালীন ছুটি উপলক্ষে পর্যটকে ভরে গেছে কক্সবাজার। সমানতালে পর্যটকরা ভিড় জমাচ্ছেন সমুদ্র সৈকত, ইনানী, হিমছড়ি, রামুর বৌদ্ধপল্লি, চকরিয়ার ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, মহেশখালীর আদিনাথসহ পুরো কক্সবাজারের পর্যটন স্পটে।

তবে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় এবার আগের চেয়ে পর্যটক সমাগম কম হবে। বিগত সময় অনেক পর্যটক সেন্টমার্টিনে অবস্থান করে নতুন বছরকে বরণ করতো।কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জাগো নিউজকে বলেন, এ সময়টা পর্যটকরা বেড়াতে কক্সবাজারকে প্রাধান্যে রাখে। আর কক্সবাজার আসা পর্যটকদের ৭০-৭৫ শতাংশ এক থেকে দুদিনের ট্যুরে সেন্টমার্টিন যান। এ বছর এ সুযোগ অবারিত নেই- তাই পর্যটক আগমন কমেছে।তিনি বলেন, ইতোমধ্যে কক্সবাজারের ৮০-৮৫ শতাংশ হোটেল-মোটেল বুকিং হয়ে গেছে। টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে জাহাজ চলাচল সচল থাকলে পর্যটকের ধারাবাহিকতা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতো। কিন্তু এখন রোববার শেষ হতে পারে পর্যটক সমাগম।তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস লিমিটেডের পরিচালক আবদুল কাদের মিশু বলেন, বর্ষবরণে আমরাই ইনডোর প্রোগ্রাম চালু করে থার্টিফাস্ট নাইটকে পর্যটকদের কাছে উপভোগ্য করে তুলি। পর্যটকদের চাহিদার কারণে এবারও বলরুমে ইনহাউজ গেস্টদের জন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।ফেনীর দাগনভূঁইয়া থেকে বেড়াতে পর্যটক আসা আহমদ রায়হান দম্পতি বলেন, সৈকতের বালুচরে দাঁড়িয়ে ১২টা ১ মিনিটে পুরনো বছরকে বিদায় এবং নতুন বছরকে বরণ করার ইচ্ছে জাগে সব পর্যটকের। এ সময় আতশবাজি ঝলকানি এবং ফানুসের আলোয় ঝলমল হতো অন্ধকার আকাশ। কিন্তু এখন আর সেটা দেখা যায় না।কক্সবাজার চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, রোহিঙ্গা বিষয়টি মানবিক বিপর্যয়। এটি কক্সবাজারের সৌন্দর্যকে ম্লান করতে পারেনি। তাই থার্টিফাস্ট নাইটে সৈকতে উন্মুক্ত অনুষ্ঠান বন্ধ রাখা যুক্তিযুক্ত হয়নি। সবাই মিলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে থার্টিফাস্ট নাইটের অনুষ্ঠান করা গেলে পর্যটনের বিভিন্ন সেক্টরে কয়েকশ কোটি টাকা বাণিজ্য হতো।টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. জিললুর রহমান বলেন, কক্সবাজারের নাজিরারটেক থেকে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত ১২০ কিলোমিটার সৈকতের কোথাও আতশবাজি, ফটকা ফোটানোসহ গান-বাজনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কিংবা ব্যান্ডসংগীতের আয়োজন করা যাবে না। তবে স্বাভাবিক অবস্থায় বালুচরে দাঁড়িয়ে সমুদ্র উপভোগ করা যাবে। বিধিনিষেধ পালনে টুরিস্ট পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর অবস্থানে থাকবে।এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, সরকারি নির্দেশনার প্রেক্ষিতে সৈকতের উন্মুক্ত স্থানে থার্টিফাস্ট নাইট উপলক্ষে কনসার্ট, গান বাজনাসহ সব ধরনের আয়োজন বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে হোটেল কর্তৃপক্ষ চাইলে তাদের অতিথিদের জন্য নববর্ষ উদযাপনের আয়োজন করতে পারে। সার্বক্ষণিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পর্যটন এলাকায় টহলে রয়েছে। পর্যটক নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশ ও র্যাব মাঠে থাকবে।