ই-পেপার | শুক্রবার , ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
×

চট্টগ্রামে বিশ্ব পলিও দিবস পালিত

24 অক্টোবর বিশ্ব পোলিও দিবস পালিত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ‘এন্ড পলিও নাও’ স্লোগান্টিকে সামনে রেখে রোটারি ইন্টারন্যাশনাল, ইউনিসেফ ও হু এর যৌথ ভূমিকায় রোটারি ইন্টারন্যাশনাল ডিস্ট্রিক্ট-৩২৮২ বাংলাদেশের উদ্যােগে চট্টগ্রামেও পালিত হয়েছে বিশ্ব পলিও দিবস। গত ২৪ (অক্টোবর)’২২ ইং সোমবার বিকাল ৪ টায়, নগরীর ঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট থেকে শুরু হয়ে লালখানবাজার, কাজীর দেউড়ি মোড় হয়ে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে এসে শেষ হয়। এতে চট্টগ্রাম, রোটারি ক্লাব অব চিটাগাং হিলটাউন আরআইডি-৩২৮২ (রাঙ্গামাটি), কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিভিন্ন ক্লাবের রোটারিয়ানবৃন্দ অংশগ্রহন করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রোগ্রাম চেয়ার রোটারি ক্লাব অব চিটাগাং মিড টাউনের পিপি ইন্জিনিয়ার কামালুর রহমান। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা গভর্নর চৌধুরী।

পোলিও একটি অন্যান্য ভাইরাসের মত সংক্রামক রোগ। পোলিওমাইলাইটিসের বিরুদ্ধে টিকা আবিষ্কারক জোনাস সালকের জন্মবার্ষিকী স্মরণে ও এই রোগ নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে গোটা পৃথিবীতে পালিত হয় বিশ্ব পোলিও দিবস। ইহা একটি পক্ষাঘাতগ্রস্ত মারাত্মক রোগ। এই ভাইরাস স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রমণ করে এবং অল্প সময়ের মধ্যে পক্ষাঘাত ঘটাতে পারে। এতে আক্রান্ত ব্যক্তি প্যারালাইজড হয়ে যেতে পারেন। অনেক ক্ষেত্রে মৃত্যুও হতে পারে।

রোটারি ইন্টারন্যাশনাল ডিস্ট্রিক্ট-৩২৮২ এর ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর রুহেলা খাঁন চৌধুরী বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী পোলিও নির্মূলে রোটারি ইন্টারন্যাশনাল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশকে পোলিও মুক্ত ঘোষণা করা হয়। তবে পার্শ্ববর্তী পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের কিছু এলাকায় এখনো পোলিওর প্রকোপ রয়েছে।পার্শ্ববর্তী দেশে প্রকোপ থাকায় যে কোনো সময় এ রোগ বাংলাদেশে আবারো দেখা দিতে পারে। তাই আমাদের সকলের মাঝে এ রোগ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা জরুরি। শিশুকে টিকাদানের বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। অবশ্যই পোলিও টিকা দিতে হবে। পোলিওমুক্ত বিশ্ব রোটারীর অঙ্গীকার রোটারি ক্লাবের সদস্যরা ও রোটারিয়ান বিল গেটস, কো-ফাউন্ডার কো-চেয়ার, বিল মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন পোলিও ফান্ডে স্বপ্রণোদিত হয়ে মুক্ত হস্তে দান করায় সুবিধাবঞ্চিত মানুষরা উপকার পাচ্ছেন। আজ সোমবার (২৪ অক্টোবর) পোলিও দিবসটি বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও আমরা পালন করছি’।

রোটারি ইন্টারন্যাশনাল ডিস্ট্রিক্ট-৩২৮২ এর এরিয়া ডিরেক্টর ডা: মঈনুল ইসলাম মাহমুদ বলেন,’যে কোনো বয়সের মানুষ এই রোগে সংক্রমিত হতে পারে, তবে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। বাংলাদেশ এখন পোলিও মুক্ত। পোলিও টিকাদানের সফলতায় ২০১৩ সালে এ দেশ পোলিও মুক্ত ঘোষণা করা হয়। বিশ্বব্যাপী পোলিও নির্মূলে রোটারি ইন্টারন্যাশনাল ও ইউনিসেফ অগ্রনী ভূমিকা পালন করে। জন্মের পর বাচ্চার বয়স যখন দুই মাস হয় তখন থেকে তাকে দুই মাস অন্তর মিনিমাম তিনটি ডোজ, পরে ১৮ মাস, ৪ বছর এবং ছয় বছর সময়ে অতিরিক্ত আরও তিনটি ডোজ দিলে শরীর পূর্ণাঙ্গভাবে পোলিও সুরক্ষিত থাকে’।

চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের ভাষ্য মতে, পোলিও সচরাচর পাঁচ বছরের নিচের বয়সের বাচ্চাদের বেশি হয়ে থাকে। শরীরের নার্ভাস সিস্টেমকে আক্রমণ করে প্যারালাইজড করা থেকে শুরু করে পঙ্গুত্ব, অনেক সমস্যাই পোলিওর কারণে হয়ে থাকে। পোলিও ভাইরাস শরীরে মুখের মধ্য দিয়ে প্রথমে প্রবেশ করে গলায় বসে থাকে।

তারপর আস্তে আস্তে শরীরের ভেতরে প্রবেশ করে অন্ত্রের মধ্যে স্থায়ীভাবে গেড়ে বসে। মুখে ঢোকার পরে গলার মধ্যে থাকা কোনো কোষের আবরণে এই ভাইরাসের একটি স্পেসিফিক রিসেপ্টরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কোষের ভেতরে প্রবেশ করে।এটি সহজে একজন থেকে আরেকজনের মধ্যে ছড়াতে পারে। বিশেষ করে কেউ পোলিও আক্রান্ত হলে তার পায়খানা দিয়ে সহজে জীবাণু ছড়াতে পারে। আক্রান্তের শরীরের গলায় এবং অন্ত্রে জীবাণুটি থাকে।

তাই কাশি দিলে অথবা যেখানে-সেখানে কফ ফেললে তার থেকে বেরিয়ে আসা ড্রপলেট ছড়িয়ে অন্যকে সহজে আক্রান্ত করতে পারে এবং সেই সঙ্গে অন্ত্রে থাকার কারণে পায়খানা দিয়ে জীবাণুটি অতি সহজে ছড়ায়। এমনকি আক্রান্তের শরীর ভাল হয়ে গেলেও জীবাণুটি অনেকদিন পর্যন্ত (প্রায় ২০ সপ্তাহ) অন্ত্রে থেকে গিয়ে পায়খানার মধ্য দিয়ে ছড়াতে পারে।

দুই-তৃতীয়াংশ আক্রান্তের শরীরে শুরুতে পোলিও কোন সিমটম (লক্ষন) প্রকাশ করে না। এক তৃতীয়াংশের শরীরে জ্বর গলাব্যথা, মাথাব্যথা, ঘাড় নাড়াতে না পারা, সারা শরীরজুড়ে ব্যথা করা এমন সবকিছু সমস্যাসহ আরও কিছু সমস্যা দেখা দেয়। সচরাচর লক্ষণ উপসর্গগুলো কারও ক্ষেত্রে তিন থেকে পাঁচ দিন, কারও ক্ষেত্রে এক সপ্তাহ থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে নিজে নিজে চলে যায়। তবে অল্প কিছুসংখ্যক আক্রান্তের দেহে সমস্যাটি মারাত্মক আকার ধারণ করে। বিশেষ করে শরীরের স্পাইনাল কর্ড এবং ব্রেন পোলিও ভাইরাসের তারা আক্রান্ত হলে সমস্যা তখন মারাত্মক হয়ে ওঠে।

পোলিও আক্রান্ত হলে কিছু সাপোর্ট ট্রিটমেন্ট ছাড়া এর সরাসরি তেমন একটা চিকিৎসা নেই। তাছাড়া পোলিও আক্রান্ত হয়ে সিরিয়াস হয়ে গেলে, বিশেষ করে প্যারালাইসিসের দিকে গেলে,পূর্ণাঙ্গ নিরাময়ে তেমন কোনো চিকিৎসা নেই। তাই আগে থেকে পোলিও ভ্যাকসিন দেয়াটাই এ ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার অন্যতম উপায়।

বিশ শতকের প্রথমার্ধে সবচেয়ে বেশি শিশু মৃত্যু অথবা পঙ্গুত্ববরণের পেছনে অন্যতম একটি কারণ ছিল এই পোলিও। ১৯৫০ সালে আমেরিকান চিকিৎসক উইলিয়াম হেমন পিটসবার্গ ইউনিভার্সিটিতে পোলিও ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেন। তবে এখনও পৃথিবীর বেশ কিছু জায়গায় বিশেষ করে এশিয়া আফ্রিকা এবং ল্যাটিন আমেরিকার কিছু দেশে শত ভাগ পোলিওমুক্ত করা সম্ভব হয়নি। যদিও গত শতাব্দীর ৯০ দশকের মধ্যেই পৃথিবীর ৯৯ ভাগ অংশকে পোলিওমুক্ত করা হয়েছে।

পলিও দিবসে অন্যান্যের মাঝে ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর ইলেক্ট ইঞ্জিনিয়ার মো. মতিউর রহমান। ডিস্ট্রিক্ট ফার্স্ট পিপি জিয়া উদ্দিন চৌধুরী, প্রোগ্রাম চেয়ার ইঞ্জিনিয়ার জামালুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট সেক্রেটারি মো. শাহজাহান,ডিস্ট্রিক্ট পোলিও প্লাস কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার পিপি খাইরুল মোস্তফা, এডিশনাল ডিস্ট্রিক্ট কো অর্ডিনেটর ও মেম্বার সেক্রেটারি মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম নান্টু, জয়েন্ট সেক্রেটারি সুদীপ কুমার চন্দ, ডিস্ট্রিক্ট পোলিও ডে উদযাপন রেজিস্ট্রেশন চেয়ার পিপি রহিম উল্লাহ, এডিশনাল ডিস্ট্রিক্ট সেক্রেটারী সিপি মোহাম্মদ ওমর আলী ফয়সাল, এডিশনাল এরিয়া কো অর্ডিনেটর পিপি মোহাম্মদ আকবর হোসাইন, সিপি মোহাম্মদ হাসনাত চৌধুরী,, জোনাল কো-অর্ডিনেটর এমদাদুল আজিজ চৌধুরী, পিপি কফিল উদ্দিন রিপন।

আরো উপস্থিত ছিলেন রোটারি ক্লাব অব চিটিগাং হিল টাউনের সভাপতি অধ্যাপক প্রদীপ কুমার দাশ,পাস্ট সভাপতি মো: আমজাদ হোসেন, দেব দুলাল ভৌমিক, সচিব অরুন মল্লিক, রোটারিয়ান শিলা চক্রবর্তী, চক্রবর্তী শাহা রুজি ও ইমাজিন টিমের সদস্য বৃন্দ ।